মানব জীবনের সবচেয়ে সুখী মুহূর্তগুলো খুঁজে বের করাই ছিল ৮৫ বছরের গবেষণার উদ্দেশ্য।
দীর্ঘ ৮৫ বছর ধরে চলা এক গবেষণায় মানুষের জীবনের সুখের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৩৮ সাল থেকে ৭২৪ জন মানুষের জীবনচক্রকে পর্যবেক্ষণ করে এই গবেষকরা, যাদের মধ্যে অনেকেই কাজ শুরু করেছিলেন, আজ নেই, তবু গবেষণা থেমে নেই। এক প্রজন্মের পর আরেক প্রজন্মের গবেষকরা এই মানুষের ওপর নজর রেখেছেন—শৈশব থেকে কৈশোর, যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্ব এবং বার্ধক্য পর্যন্ত সব পর্যায়ের জীবন অধ্যয়ন করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ব্যক্তিগত জীবনের নয়, পরিবার, বন্ধুত্ব, প্রেম এবং সম্পর্কের প্রতিটি স্তরকেই মনোযোগ দিয়ে দেখা হয়েছে। যাদের বিয়ে হয়েছে, তাঁদের সঙ্গী এবং সন্তানের জীবনও পর্যবেক্ষণে অন্তর্ভুক্ত ছিল। সময়ের সঙ্গে তাঁদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়—সুখ, দুঃখ, সমস্যার মোকাবিলা—লিখিত ও প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ধরা হয়েছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের সুখের চাবিকাঠি খুঁজে বের করা। বিশ্লেষণের পর দেখা গেছে, মানুষের সুখ নির্ভর করে মূলত সম্পর্কের উপর। যাদের সম্পর্ক সুদৃঢ়, বিপদে পাশে থাকে কেউ, তাঁদের জীবন শুধু সুখী নয়, তারা আরও দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনযাপন করেছেন। অন্যদিকে, যাদের সম্পর্ক জটিল বা সমস্যা পূর্ণ, তারা তুলনামূলকভাবে অসুখী থেকেছেন এবং আয়ু কম হয়েছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সমাজে উচ্চ অবস্থানে থাকা, বুদ্ধিমান হওয়া বা ভাল জিন থাকা, সুখের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। বরং যাদের সামাজিক দক্ষতা ভালো, সহজেই মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং বজায় রাখতে সক্ষম, তারা বেশি সুখী ছিলেন। এই গবেষণা প্রমাণ করেছে, মানুষের সুখ শুধু ব্যক্তিগত অর্জন বা অবস্থান থেকে আসে না, বরং জীবনের প্রতিটি স্তরে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যকর সম্পর্কই সুখের মূল চাবিকাঠি।