Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

ব্রিসবেনের রোমাঞ্চে ইংল্যান্ডের লড়াই! রুট-ক্রলির দুরন্ত জুটিতে ৫০ রান, দ্বিতীয় অ্যাশেজ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দৃঢ় শুরু

অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড, দ্বিতীয় অ্যাশেজ টেস্টের প্রথম দিন ব্রিসবেনে শুরু হতেই জমে উঠল উত্তেজনা। শুরুর ধাক্কা সামলে ইংল্যান্ডকে স্থিতিশীলতার পথে ফেরাল জো রুট ও জ্যাক ক্রলির দারুণ জুটি। দুই ওপেনার দ্রুত আউট হওয়ার পরে চাপ বাড়ছিল ইংল্যান্ডের শিবিরে, ঠিক তখনই রুট ক্রলি মিলে তুলে আনেন গুরুত্বপূর্ণ ৫০ রানের পার্টনারশিপ। তাঁদের ব্যাট থেকে আসে দারুণ শট খেলা, ঠান্ডা মাথায় স্ট্রাইক রোটেশন এবং অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধ। ফলে স্কোরবোর্ডে ৮৬/২ তুলে ইংল্যান্ড তৈরি করে সম্ভাবনার মঞ্চ। অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা শুরুতে কিছুটা আক্রমণাত্মক ছিল, বিশেষত স্টার্ক ও কামেরন্সের স্পেল ইংল্যান্ডকে সমস্যায় ফেলে। কিন্তু মধ্যপর্বে ব্যাটসম্যানদের ধৈর্য ও সংযম পরিস্থিতিকে পাল্টে দেয়। রুটের অভিজ্ঞতা ও ক্রলির আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিং ও বোলিংয়ে ধার ছিল, তবে রুট-ক্রলির জুটির সামনে তা কিছুটা ফিকে হয়ে যায়। প্রথম দিনের এই লড়াই দেখিয়ে দিল দ্বিতীয় অ্যাশেজ টেস্ট হবে আরও উত্তেজনাপূর্ণ। ব্রিসবেনের স্বপ্নের উইকেটে দুই দলের কৌশল ও মানসিক লড়াইই নির্ধারণ করবে ম্যাচের ভবিষ্যৎ।

অধ্যায় ১:  ব্রিসবেনে নতুন দিনের সূচনা—অ্যাশেজের উত্তাপ শুরু হয় প্রথম ঘণ্টাতেই

গাব্বার উইকেট বরাবরই অস্ট্রেলিয়ানদের বড় অস্ত্র। ঐতিহ্যের দিক থেকে এই মাঠ অস্ট্রেলিয়ার কাছে দুর্গ স্বরূপ, যেখানে সফরকারী দলগুলির জন্য জয় ছিনিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। বাউন্সি, পেস-সহায়ক এবং প্রথম সেশনে অস্বস্তিকর মুভমেন্ট—এই তিন জিনিসই নতুন বলের ব্যাটসম্যানদের জন্য দুঃস্বপ্ন। ঠিক সেরকমই শুরু হয় দ্বিতীয় অ্যাশেজ টেস্টের প্রথম দিন।

টস জিতে যখন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন ধারাভাষ্যকার থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ, সবাই অবাক হন। গাব্বার পিচে প্রথমের দিকের সময়টা খুবই বিপজ্জনক। তবে ইংল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা ছিল—ব্যাটসম্যানরা নতুন বলের চ্যালেঞ্জ সামলে নিতে পারলে, শুষ্ক পিচ লাঞ্চের পরে বেশি সহায়তা দেবে ব্যাটারদের এবং চতুর্থ ইনিংসের জন্য ফাটলযুক্ত উইকেট তৈরি হবে। এই কৌশলগত ঝুঁকি ছিল ইংল্যান্ডের ইনিংসের ভিত্তি স্থাপনের প্রথম পদক্ষেপ।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা ইংল্যান্ডের সেই পরিকল্পনাকে ভেঙে ফেলার উদ্যোগে নামেন প্রথম ওভার থেকেই। বল হাতে আসেন অভিজ্ঞ পেসার মিচেল স্টার্ক (Mitchell Starc)। তাঁর প্রথম ওভারের বলগুলো ছিল গতি ও সুইংয়ের নিখুঁত মিশ্রণ, যা ইংল্যান্ডের ওপেনারদের নড়বড়ে করে তোলে। স্টার্ক এবং অন্যদিক থেকে অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের (Pat Cummins) সম্মিলিত আক্রমণ প্রথম ঘণ্টার মধ্যেই স্পষ্ট করে দেয়, এই টেস্ট ম্যাচ সহজে শেষ হবে না। অ্যাশেজের উত্তাপ প্রথম ঘণ্টাতেই সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে যায়।


অধ্যায় ২:  অস্ট্রেলিয়ার প্রথম আঘাত—ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে চরম চাপ 

ইংল্যান্ডের অধিনায়কের ঝুঁকি নেওয়ার সিদ্ধান্ত দ্রুত ভুল প্রমাণিত হতে শুরু করে। মিচেল স্টার্কের প্রথম স্পেল ছিল রীতিমতো আগুনে। তাঁর লেন্থ বোলিং রুটিনমাফিক হলেও, বলের শেষ মুহূর্তে সুইং ওপেনারদের জন্য বিপদ ডেকে আনে। অন্যদিকে, জশ হ্যাজলউড (Josh Hazlewood) এবং অধিনায়ক প্যাট কামিন্স দু'দিক থেকে ধারাবাহিক লাইন-লেন্থ বজায় রেখে ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তিতে ফেলছিলেন।

শুরুতেই দুই উইকেট—ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ যেন হাওয়ায় ভরসা হয়ে পড়েছিল।

উইকেট পতন ও বিপর্যয়ের বিশ্লেষণ:

১. প্রথম উইকেট: ওপেনার বেন ডাকেট (Ben Duckett) মাত্র ৪ রান করে স্টার্কের একটি সামান্য আউটসুইং বলে খোঁচা মারেন। ব্যাটের কোণ ভুল থাকায় সহজ ক্যাচ চলে যায় স্লিপে। প্রথম উইকেট পড়ে দ্রুত। এই ধরনের উইকেটে প্রথম উইকেট হারানো মানেই পরবর্তী ব্যাটসম্যানের ওপর দ্বিগুণ চাপ। ২. দ্বিতীয় উইকেট: তিন নম্বরে নামা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান অলি পোপকে (Ollie Pope) কাবু করেন হ্যাজলউডের নিখুঁত লেন্থের বল। হ্যাজলউডের বলগুলি ছিল এমন জায়গায়, যা ডিফেন্স করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। বল কিছুটা ভেতরে ঢুকে তাঁকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে। পোপ মাত্র ১০ রানে আউট হন।

মাত্র ৩০/২ স্কোরে ইংল্যান্ড পড়ল চরম চাপের মুখে। ব্রিসবেনের দর্শকদের উল্লাস আর অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের উৎসাহ তখন তুঙ্গে। পরিস্থিতি এমন ছিল যে, আরও একটি উইকেট পড়লেই মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই ইংল্যান্ডের ইনিংস ধ্বসে পড়তে পারত। ঠিক এই চাপের মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল একজন স্থিতধী ব্যাটারের, যিনি ম্যাচের গতিপথ বদলে দিতে পারেন।


অধ্যায় ৩:  ব্রিসবেনের বাইশ গজ—বোলারদের স্বর্গ, ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা 

ব্রিসবেনের গাব্বা পিচ তার নামের মর্যাদা রেখেছিল। প্রথম দুই ঘণ্টায় পিচটি ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিনতম পরীক্ষায় ফেলছিল। বাউন্স কিছুটা অনিয়মিত, আবার পেসও যথেষ্ট। তার উপর স্ট্যান্ডার্ড অস্ট্রেলিয়ান লাইন-লেন্থের বোলিং, যা সামান্যতম দুর্বলতার সুযোগ নিলেই ব্যাটসম্যানকে আউট করে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ করে জানান, পিচে যথেষ্ট আর্দ্রতা ছিল, যা বোলারদের বাড়তি সহায়তা দিচ্ছিল। বল পিচ করার পর সামান্য অতিরিক্ত মুভমেন্ট করছিল।

এই পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের থেকে ভরসা একটাই—অধিনায়ক, যিনি এই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। উইকেটে আসেন জো রুট, আর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন তরুণ ওপেনার জ্যাক ক্রলি, যিনি দ্বিতীয় টেস্টে নিজের জায়গা ফিরে পেয়েছেন। দুজনেই জানতেন—এই মুহূর্তটি কেবল উইকেটে টিকে থাকার লড়াই নয়, এটি অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের মনস্তাত্ত্বিক আক্রমণকে প্রতিহত করার লড়াই। উইকেট রক্ষা করাই প্রথম লক্ষ্য, রান আসবে পরে। এমন জায়গায় ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন কৌশল হলো—ধৈর্য এবং মানসিক দৃঢ়তা। এই দুই গুণের ফলেই জন্ম নেয় রুট-ক্রলির মহামূল্যবান জুটি।


অধ্যায় ৪:  রুট–ক্রলির মহামূল্যবান জুটি—ইংল্যান্ডের লড়াইয়ে ফেরা 

৩০/২ স্কোরে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ডের ইনিংসকে টেনে তোলার দায়িত্ব কাঁধে নেন জো রুট ও জ্যাক ক্রলি। তাঁদের এই জুটি ছিল ধৈর্য, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার এক চমৎকার সমন্বয়, যা টেস্ট ক্রিকেটের আসল সৌন্দর্যকে তুলে ধরে।

৪.১ ধৈর্য, দক্ষতা ও কৌশলের সমন্বয়

জো রুট ইংল্যান্ডের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। তাঁর ব্যাটিংয়ের মাধুর্য হলো—সুইং সামলানোর ক্ষমতা, দ্রুত ফুটওয়ার্ক, এবং যেকোনো পেসারের বলকে সহজে খেলতে পারা। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার পুরো ব্যবহার করে উইকেটের এক প্রান্ত ধরে রাখেন। অন্যদিকে, জ্যাক ক্রলি পরিচিত আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য। কিন্তু আজ তিনি দেখালেন অন্যরকম ছবি—দুজনে খেললেন হিসেব করে, ঠান্ডা মাথায়, ধৈর্য নিয়ে।

পিচের আচরণ বুঝে নিয়ে তাঁরা দুটি বড় কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেন: ১. লেন্থ বলগুলো ডিফেন্স করে খেলা: তাঁরা অযথা বলের লাইনে ব্যাট না নিয়ে এসে কেবল ডিফেন্স করেন, যাতে বলের সামান্য মুভমেন্টও তাদের ব্যাটের কোণে না লাগে। ২. শর্ট বলগুলো ছেড়ে দেওয়া: আক্রমণাত্মক শট যেমন পুল বা কাট না করে বরং শরীর থেকে দূরে থাকা শর্ট বলগুলো ছেড়ে দেন। এই কৌশলে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের শর্ট বলের পরিকল্পনা অকার্যকর হয়ে পড়ে।

৪.২ স্ট্রাইক রোটেশন ও স্কোরবোর্ডের চাপমুক্তি

রুটের দৃঢ়তা ও ক্রলির স্বচ্ছন্দ স্ট্রাইক রোটেশন ছিল এই জুটির মূল শক্তি। তাঁরা এক-দু' রান নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখেন, যা অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের এক জায়গায় বারবার বল করার সুযোগ দেয়নি।

  • জো রুটের টেকনিক: তিনি তাঁর সুপরিচিত 'ব্যাক-ফুট গেম' ব্যবহার করেন এবং নতুন বলের সুইংয়ের ওপর প্রভাব পড়তে দেননি। তিনি স্পিনার নাথান লায়নকে (Nathan Lyon) সম্মান করলেও, তাঁর ওপর আক্রমণাত্মক ফুটওয়ার্ক দেখিয়ে তাঁর লেন্থ পরিবর্তন করতে বাধ্য করেন।

  • জ্যাক ক্রলির মানসিকতা: ক্রলি তাঁর স্বভাবজাত আক্রমণাত্মক মনোবৃত্তি দূরে রেখে 'ব্যাট-প্যাড কাছাকাছি' রেখে খেলেন, যেন সামান্য মুভমেন্টও তাঁর প্রতিরক্ষা ভেদ করতে না পারে। তিনি প্রচুর বল ছেড়েছেন, যা তাঁর ধৈর্যশীল মানসিকতার প্রমাণ।

৪.৩ ৫০ রানের জুটি—ম্যাচের মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত

চাপের মধ্যে জুটি গড়া সবসময়ই বড় ব্যাপার। রুট-ক্রলির এই জুটি শুধু স্কোর বাড়ায়নি, বরং অস্ট্রেলিয়ান ড্রেসিংরুম এবং ব্রিসবেনের দর্শকদের মধ্যে সৃষ্ট উচ্চ চাপকে কিছুটা প্রশমিত করে।

মানসিক বিজয়: অর্ধ-শতরানের এই পার্টনারশিপ অস্ট্রেলিয়ানদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। শুরুতেই দুই উইকেট নিয়ে যে উৎসাহ তৈরি হয়েছিল, তা কিছুটা হলেও স্তিমিত হয়।  টেম্পো পরিবর্তন: তাঁরা নিজেরাই ম্যাচের টেম্পো তৈরি করেন। মাঝে কয়েকবার বিপজ্জনক শট খেললেও, তাঁরা দ্রুত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে ফেরেন।

তাঁদের জুটি যখন ৫০ ছাড়াল, ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে স্বস্তির পরশ ফিরে আসে। এটি ছিল প্রথম দিনের খেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদল।


অধ্যায় ৫: অস্ট্রেলিয়ার বোলিং কৌশল—পরিকল্পনা ভালো, বাস্তবায়ন মাঝেমাঝি 

অস্ট্রেলিয়া বোলাররা শুরুটা দারুণ করলেও মধ্যপর্বে তাদের লাইন কিছুটা ছড়িয়ে যায়। কামিন্সের বোলিং পরিকল্পনা ছিল নিখুঁত, কিন্তু রুট-ক্রলির দৃঢ়তা সেই পরিকল্পনায় ছিদ্র তৈরি করে।

১. মিচেল স্টার্ক (Mitchell Starc): স্টার্ক ইনসুইং ও আউটসুইং দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করলেও, মধ্য সেশনে তিনি কিছুটা ফুল লেন্থের বল করতে শুরু করেন, যা রুট ও ক্রলি সহজেই ড্রাইভ করে বাউন্ডারি মারেন। তাঁর গতি ছিল আক্রমণাত্মক, কিন্তু লেন্থের সামান্য তারতম্য তাঁকে উইকেট এনে দিতে পারেনি।

২. জশ হ্যাজলউড (Josh Hazlewood): হ্যাজলউড ছিলেন সবচেয়ে ধারাবাহিক বোলার। তাঁর নিখুঁত 'চতুর্থ স্টাম্প' লেন্থের বোলিং ব্যাটসম্যানদের বারবার ভুল করতে বাধ্য করে। তবে রুটের ডিফেন্স ছিল তাঁকে ভাঙার পক্ষে যথেষ্ট শক্তিশালী। হ্যাজলউড দিনের শেষেও কোনও ভুল করেননি, কিন্তু তাঁর উইকেট-নেওয়া বলগুলো দিনের পরের দিকে আসেনি।

৩. প্যাট কামিন্স (Pat Cummins): অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক হিসেবে কামিন্স দারুণ শুরু করলেও, মধ্য সেশনে তাঁর শর্ট বলের কৌশল রুট-ক্রলির সামনে অকার্যকর হয়ে পড়ে। কিছু শর্ট বল উচ্চ বাউন্স দিলেও, সেগুলো পুল শটের দূরত্বে না থাকায় ব্যাটসম্যানরা সহজেই ছেড়ে দেন। একজন অধিনায়ক হিসেবে তিনি একাধিকবার বোলার পরিবর্তন করেও জুটি ভাঙতে পারেননি।

৪. নাথান লায়ন (Nathan Lyon): পিচ শুষ্ক না হওয়ায় প্রথম সেশনে স্পিন তেমন ধরেনি। লায়নকে আনার উদ্দেশ্য ছিল—পেসারদের বিশ্রাম দেওয়া এবং অন্য প্রান্ত থেকে চাপ সৃষ্টি করা। লায়ন ভালো লেন্থে বল করলেও, জো রুট তাঁর ওপর বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। লায়নের প্রথম স্পেলে কোনো উইকেট আসেনি।

অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা যতটা চাপ ধরে রাখতে চেয়েছিলেন, রুট-ক্রলি তাঁদের সেই পরিকল্পনায় সফলভাবে ছিদ্র করে দেন, যা ক্রিকেট মাঠে ট্যাকটিক্সের লড়াইয়ের এক উদাহরণ।


অধ্যায় ৬:  ব্রিসবেনের দর্শকদের আবেগ—অ্যাশেজ মানেই অন্যরকম বিদ্যুৎ 

ক্রিকেটে দর্শকদের প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। অস্ট্রেলিয়ান দর্শকরা গাব্বায় বরাবরই আগ্রাসী। তারা তাদের দলকে উৎসাহ দিতে এবং প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ওপর মানসিক চাপ বাড়াতে পরিচিত। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের জন্য গাব্বার পরিবেশ ছিল অতিরিক্ত চাপের। প্রতিটি ডট বল, প্রতিটি আপিল, এবং প্রতিটি উইকেট পতনে দর্শকদের উল্লাস স্টেডিয়ামের উত্তেজনাকে বাড়িয়ে দিচ্ছিল।

কিন্তু রুট ও ক্রলি ঠান্ডা মাথায় খেললেন। তাঁরা জানতেন—দর্শকের আওয়াজে নয়, ব্যাটে উত্তর দিতে হবে। তাদের এই মানসিক স্থিরতা প্রশংসাযোগ্য।

প্রতি বার যখন রুট বা ক্রলির ব্যাটে বাউন্ডারি পড়ছিল, ইংল্যান্ডের মুষ্টিমেয় সাপোর্টাররা উল্লাসে ফেটে পড়ছিলেন। এই উল্লাস যেন দলের মনোবলকে ইতিবাচক রাখে এবং অস্ট্রেলিয়ানদের আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। অ্যাশেজ মানেই এই রকম আবেগঘন পরিবেশে দুই দেশের সমর্থকদের স্নায়ু যুদ্ধ, যা ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে। প্রথম দিন ইংল্যান্ড এই স্নায়ু যুদ্ধে জয়ী হয়।


অধ্যায় ৭: প্রথম দিনের শেষের চিত্র—ইংল্যান্ডের লড়াই টিকে রইল 

দিনের খেলা শেষে ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ড হয়তো বিশাল কিছু দেখাচ্ছে না। কিন্তু ৮৬/২ স্কোরটি যে পরিস্থিতিতে এসেছিল, তার প্রেক্ষাপটে তা বিশাল।

news image
আরও খবর

প্রথম দিনের খেলায় ইংল্যান্ড বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে:

  • দুই দ্রুত উইকেটের ধাক্কা কাটানো: ইনিংসের শুরুতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারানোর পর আর কোনও পতন হতে দেননি রুট ও ক্রলি।

  • মধ্য সেশনে অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণ সামলানো: কামিন্স, স্টার্ক এবং হ্যাজলউডের সম্মিলিত স্পেলকে ঠান্ডা মাথায় সামলেছেন তাঁরা।

  • রুট-ক্রলির আত্মবিশ্বাসে ভর করে ম্যাচে ফেরা: দিনের শেষে এই জুটিই নিশ্চিত করেছে যে, ইংল্যান্ড এখনও এই টেস্ট ম্যাচে শক্তভাবে টিকে আছে।

এটি প্রমাণ করে—ইংল্যান্ড ম্যাচে দৃঢ়ভাবে ফিরে এসেছে এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে সহজে হার মানবে না।

দিনের শেষ চিত্র:

  • জো রুট: ৪২* রান (৯৮ বল)

  • জ্যাক ক্রলি: ৩৪* রান (৯২ বল)

  • পার্টনারশিপ: ৫৬ রান (১৮০ বল)

দ্বিতীয় দিনের শুরুটা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি রুট ও ক্রলি আরও এক ঘণ্টা উইকেটে টিকে থেকে ১০০+ জুটি করতে পারেন, তাহলে অস্ট্রেলিয়ার উপর চাপ বাড়বে। আর যদি শুরুতেই উইকেট পড়ে যায়, ইংল্যান্ড আবার বিপদে পড়তে পারে।


অধ্যায় ৮:  রুট—এই প্রজন্মের সর্বশ্রেষ্ঠ ইংলিশ টেস্ট ব্যাটসম্যান 

জো রুটের ব্যাটিং নিয়ে আলাদা করে বলতেই হয়। পরিসংখ্যান ও রেকর্ডের বাইরেও তিনি এই প্রজন্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ টেস্ট ব্যাটসম্যান।

তাঁর ব্যাটিংয়ের বিশেষত্ব হলো:

  • ব্যাটের ফেস নিখুঁত: সুইং এবং বাউন্স সামলানোর জন্য তাঁর ব্যাটের মুখ সবসময় বলের লাইনে থাকে।

  • পায়ের মুভমেন্ট দ্রুত: দ্রুত ফুটওয়ার্ক তাঁকে যেকোনো লেন্থের বলকে খেলার জন্য সঠিক পজিশনে নিয়ে আসে।

  • চাপ সামলানোর দক্ষতা অতুলনীয়: কঠিন পরিস্থিতিতে রান করার এবং উইকেট ধরে রাখার ক্ষমতা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে।

তিনি যখন ক্রিজে থাকেন, পুরো দল স্থিরতা পায়। আজও তিনি সেই একই দৃঢ়তা দেখালেন। অধিনায়ক হিসেবে তিনি কেবল টস বা ফিল্ডিং সাজানোর দায়িত্বে থাকেন না, ব্যাটার হিসেবেও দলকে নেতৃত্ব দেন। তাঁর এই ইনিংস শুধু রান নয়, দলের জন্য আত্মবিশ্বাস নিয়ে এসেছে।


অধ্যায় ৯:  জ্যাক ক্রলি—তরুণ রক্তের দাপট ও পরিপক্বতা 

জ্যাক ক্রলি আজ তাঁর পরিণত ব্যাটিংয়ের পরিচয় দিলেন, যা তাঁর খেলার স্বভাব বিরুদ্ধ। সাধারণত তিনি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন, কিন্তু আজ তিনি দেখালেন টেস্ট ক্রিকেটের প্রকৃত পাঠ।

তাঁর পারফরম্যান্সের গুরুত্বপূর্ণ দিক:

  • আগ্রাসী না হয়ে ধৈর্যশীল: তিনি তাঁর খেলার গতি কমিয়ে আনেন এবং ডট বল খেলার দিকে মনোনিবেশ করেন।

  • প্রচুর বল ছেড়েছেন: তিনি শরীর থেকে দূরে যাওয়া অনেক বল ছেড়ে দেন, যা অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের হতাশ করে।

  • শট সিলেকশন ছিল চমৎকার: তিনি কেবল নিশ্চিত শটগুলিই খেলেন, যার মধ্যে ছিল কভার ড্রাইভ এবং অন-ড্রাইভ।

ক্রলির এই ইনিংস ইংল্যান্ডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি প্রমাণ করলেন যে, তাঁর মধ্যে কেবল প্রতিভাই নেই, প্রয়োজনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার পরিপক্বতাও আছে। এই ইনিংস ইংল্যান্ডের টিম ম্যানেজমেন্টের তাঁর প্রতি রাখা ভরসার প্রতিদান দিল।


অধ্যায় ১০: ম্যাচের ভবিষ্যৎ—কোন দিক ঘুরবে সুতো?

এই টেস্ট ম্যাচ এখনো পুরো খোলা। দুই দলই ম্যাচে আছে এবং দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনই হবে ম্যাচের মোড় ঘুরানোর মূল চাবিকাঠি।

ইংল্যান্ডের লক্ষ্য:

রুট-ক্রলির জুটি বাড়ানো: লক্ষ্য থাকবে অন্তত ১৫০-র উপরে এই পার্টনারশিপকে নিয়ে যাওয়া। ৩৫০+ রান তোলা: গাব্বার ইতিহাস বলছে—প্রথম ইনিংসে ৩৫০+ রান করলে ম্যাচ হাতের মুঠোয় আসে। প্রথম দিনের শেষে ৮৬/২ স্কোর থেকে এই লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন, কিন্তু সম্ভব।  মধ্যক্রমের অবদান: রুট ও ক্রলির পর বেন স্টোকস এবং জনি বেয়ারস্টো-কে বড় রান করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য:

সকালে নতুন বলের সুবিধা নেওয়া: দ্বিতীয় দিনের সকালে নতুন বলের সুইং এবং বাউন্সের সুবিধা কাজে লাগিয়ে রুটকে দ্রুত আউট করা।  ইংল্যান্ডকে ২৫০–র নিচে থামানো: যদি ইংল্যান্ড ২৫০ রানের আশেপাশে অলআউট হয়, তাহলে অস্ট্রেলিয়া সহজেই লিড নিতে পারবে।  নাথান লায়নের ব্যবহার: কামিন্সকে পিচ শুষ্ক হওয়ার সাথে সাথে লায়নকে আরও বেশি ব্যবহার করতে হবে।

ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যাচের এই ভারসাম্য বজায় থাকলে তা দর্শকদের জন্য চরম বিনোদন নিয়ে আসবে। অ্যাশেজের প্রতিটি টেস্টই সাধারণত একটি 'ক্যারিয়ার তৈরি করা' পারফরম্যান্সের জন্ম দেয়। রুট-ক্রলির এই পার্টনারশিপ কি সেই ধরনের পারফরম্যান্স হবে? উত্তর মিলবে আগামীকাল।


 উপসংহার: ইংল্যান্ডের লড়াই ফিরিয়ে আনলেন রুট ও ক্রলি 

ব্রিসবেনে অ্যাশেজের লড়াই আরও জমবে আগামীদিনে। কিন্তু প্রথম দিনের ক্রিকেটে দুটি ছবি পরিষ্কার—অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণ এখনও আগের মতোই শক্তিশালী, কিন্তু ইংল্যান্ডের তরুণ ও অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা হার মানছে না।

রুট-ক্রলির ৫৬ রানের জুটি শুধু স্কোরবোর্ড বাড়ায়নি, বরং ইংল্যান্ডের আত্মবিশ্বাস, সাহস এবং টেস্ট ক্রিকেটের প্রকৃত লড়াইকে আবার সামনে এনেছে। তারা অস্ট্রেলিয়ার আক্রমণাত্মক মেজাজকে প্রশমিত করেছে এবং দলকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় এনেছে।

সিরিজের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে, তা নির্ভর করছে পরের দিনের সেশনের উপর। কিন্তু আজকের খেলা একটি কথাই প্রমাণ করল—

"অ্যাশেজ মানেই সেরা দুই দলের আগুনে লড়াই! এবং এই লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য ইংল্যান্ড প্রস্তুত।"

অপেক্ষায় গাব্বার দ্বিতীয় দিনের আরও রোমাঞ্চকর ক্রিকেট।

Preview image