মুম্বইয়ের এক তরুণী অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে খাবার অর্ডার করেছিলেন। কিছুক্ষণ পরই দেখেন, হুইলচেয়ারে বসা এক ডেলিভারি কর্মী খাবার হাতে এসে পৌঁছেছেন সময়মতো। তাঁর পেশাদারিত্ব ও ইতিবাচক মনোভাব দেখে তরুণী মুগ্ধ হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে প্রশংসার ঝড় তোলে নেটপাড়ায়।
মুম্বই: সমাজে প্রতিনিয়ত এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। তেমনই এক মানবিক ঘটনার সাক্ষী হল মুম্বইবাসী। অনলাইন খাবার সরবরাহ সংস্থার এক প্রতিবন্ধী ডেলিভারি এজেন্টের দায়িত্ববোধ এবং আত্মসম্মানের গল্পে মুগ্ধ গোটা নেটপাড়া।
সম্প্রতি মুম্বইয়ের এক তরুণী একটি জনপ্রিয় ফুড ডেলিভারি অ্যাপের মাধ্যমে খাবার অর্ডার করেন। অর্ডার কনফার্ম হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি সংস্থার তরফে একটি বার্তা পান— তাঁকে খাবার পৌঁছে দেবেন এমন এক ডেলিভারি কর্মী, যিনি হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন। বার্তায় আরও উল্লেখ ছিল, যদি তিনি এতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন, তাহলে বিকল্প ডেলিভারি এজেন্ট পাঠানো হবে।
কিন্তু তরুণী দ্বিধা না করে জানান, তাঁর কোনো আপত্তি নেই। কিছুক্ষণ পর ডেলিভারি এজেন্ট নিজেই ফোন করে জানান, “আমি হুইলচেয়ারে বসে কাজ করি, আপনি নিচে এলে আমি খাবার প্যাকেটটি হস্তান্তর করব।” তরুণী তৎক্ষণাৎ নিচে যান এবং যা দেখেন, তাতে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। হুইলচেয়ারে বসা এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি হাসিমুখে তাঁর হাতে খাবার তুলে দেন। পেশাদারিত্বে ভরপুর তাঁর আচরণে তরুণী মুগ্ধ হন।
ঘটনাটি তিনি পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন একটি পোস্টের মাধ্যমে। সেখানে তিনি লেখেন, “আমি অভিভূত হয়েছি। হুইলচেয়ারে বসা এই মানুষটি যেভাবে আত্মসম্মান বজায় রেখে কাজটি করলেন, তা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। আমার অর্ডার সময়মতো পৌঁছেছে, কোনও সমস্যা হয়নি। তাঁর শালীনতা ও পেশাদারিত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছে।”
পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। হাজার হাজার মানুষ পোস্টটিতে লাইক ও কমেন্ট করেন। অনেকেই লিখেছেন, এই ধরনের উদ্যোগ সমাজে অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কেউ কেউ বলছেন, “প্রতিবন্ধী মানুষদের সুযোগ দিলে তারাও ঠিক সমানভাবে দক্ষ ও দায়িত্ববানভাবে কাজ করতে পারেন।”
একজন নেটিজেন নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে লেখেন, “আমারও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি একবার মুদিখানার জিনিস অর্ডার করেছিলাম, সেখানেও জানানো হয়েছিল যে ডেলিভারি কর্মী একজন প্রবীণ নাগরিক। এই সংস্থাগুলোর উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।”
ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি ডেলিভারির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি মানবিকতার ও সম্মানের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই গল্প প্রমাণ করেছে যে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনও একজন মানুষের কাজের যোগ্যতা বা আত্মসম্মানকে কমাতে পারে না।
সমাজের প্রতিটি স্তরে এমন ইতিবাচক মানসিকতা ছড়িয়ে পড়া জরুরি। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এমনভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে, তাহলে তা শুধুমাত্র মানবিক নয়, বরং সামাজিক উন্নতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হবে।
শেষ পর্যন্ত এই ঘটনাটি আমাদের শেখায়— মানবতা, সম্মান ও দায়িত্ববোধই জীবনের প্রকৃত শক্তি। শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস থাকলে কোনও কাজই অসম্ভব নয়। হুইলচেয়ারে বসা সেই ডেলিভারি বয় আজ নিঃশব্দেই হয়ে উঠেছেন অসংখ্য মানুষের অনুপ্রেরণা।