Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

কোচবিহারের সেতু ধসে নিহতের আশঙ্কা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

কোচবিহারের পুরোনো সেতু ধসে পড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সেতুর অবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল, তবে দুর্ঘটনা ঘটার পর নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, এবং কর্তৃপক্ষের অবহেলা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।

কোচবিহারের সেতু ধসে নিহতের আশঙ্কা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
জননিরাপত্তা

কোচবিহারে সেতু ধস: জনদুর্ভোগ, নিরাপত্তার চরম অবনতি এবং স্থানীয়দের ক্ষোভ

কোচবিহারের একটি পুরনো সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনা পুরো রাজ্যকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। এই দুর্ঘটনা শুধু এক infrastructure ধ্বংসের ঘটনা নয়, এটি প্রশ্ন তুলেছে জনগণের নিরাপত্তা এবং রাজ্যের উন্নয়নমূলক কাজগুলোর প্রতি প্রশাসনের দায়বদ্ধতা সম্পর্কে। এই আর্টিকেলটিতে আমরা কোচবিহারের সেতু ধসের ঘটনা, স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া, দুর্ঘটনার কারণ এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিতে পারে তা বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করব।

১. কোচবিহারে সেতু ধসের ঘটনা: সময়, স্থান এবং পরিস্থিতি

কোচবিহারের এই সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনাটি ঘটে গত সপ্তাহে, যখন সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে একটি ব্যস্ত সময় ছিল। সেতুর উপর দিয়ে চলছিল বেশ কিছু গাড়ি এবং পণ্যবাহী যানবাহন। স্থানীয়দের মতে, সেতুর কাঠামো এবং অবস্থা দীর্ঘদিন থেকেই বিপজ্জনক ছিল, তবে এটি আরও খারাপ হয়ে ওঠে সম্প্রতি। সেতুর মূল অংশ ভেঙে পড়ায় তা দিয়ে চলাচলকারী বহু যান আটকে যায় এবং এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
 

কোচবিহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু, যেটি শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল, গত সপ্তাহে ভেঙে পড়ে। সেতুটি ছিল খুব পুরনো, এবং এর অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সেতুটির কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং এর জন্য দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানানো হয়েছিল।

ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে, যখন সেতুর ওপর দিয়ে বেশ কয়েকটি যানবাহন চলছিল। সেতুর কেন্দ্রীয় অংশটি হঠাৎ করে ধসে পড়লে সেখানে চলাচলকারী প্রায় ১০টি গাড়ি আটকে যায়। fortunately, কোনো বড় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি, তবে সেতুর ভাঙা অংশে আটকে পড়া গাড়ির মধ্যে কয়েকজন আহত হয়েছেন।

২. সেতুর অবস্থা এবং প্রশাসনিক অবহেলা

কোচবিহারের সেতুর অবস্থা যে এতদিনে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল, তা স্থানীয় বাসিন্দারা আগেই জানিয়েছিলেন। তারা বার বার প্রশাসনের কাছে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছিলেন, কিন্তু সেই দাবি উপেক্ষিত ছিল। এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “আমরা জানতাম সেতুর অবস্থা খারাপ, বারবার জানিয়েছি, কিন্তু কেউ কিছু করেনি। আজ আমরা এর ফল ভোগ করছি।”

এই পরিস্থিতি প্রশাসনের অবহেলা ও জনদুর্ভোগের এক নজির হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, সেতু সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “সেতুর কাঠামোগত অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছিল। আমরা বার বার জানিয়েছি, কিন্তু কেউ শুনে না।” এমন পরিস্থিতিতে, সেতুর সংস্কারের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, যা এই ধরনের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হতে পারে।

স্থানীয়রা দাবি করছেন, সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের মতে, সেতু সংস্কারের জন্য যথেষ্ট বাজেট বরাদ্দ ছিল, তবে তা যথাযথভাবে ব্যবহার হয়নি। তারা আরও অভিযোগ করেন, "প্রশাসন শুধু ক্ষমতায় থাকলেও, জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে।"

৩. সেতু ধসের পর স্থানীয়দের ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ

সেতুর ধসের পর থেকে স্থানীয়রা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা অভিযোগ করেন, “অবিলম্বে সেতু সংস্কার করা হোক এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।” ক্ষুব্ধ জনতা সেতুর ধ্বংসাবশেষের সামনে এসে বসে প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। তারা দাবি করেন, সরকার যে পরিমাণ অর্থ বাজেটে বরাদ্দ করেছে, তা যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়নি। বিশেষ করে সেতু সংস্কারের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল, তা কোথায় গেল?

বিক্ষুব্ধ জনতা স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আরও তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তারা দাবি করেন, "এখন সময় এসেছে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর, নয়তো ভবিষ্যতে আরও অনেক সেতু এমনভাবে ভেঙে পড়তে থাকবে।"
 

কোচবিহারের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ সেতুর ধ্বংসাবশেষের সামনে এসে জমা হন এবং সেতু সংস্কারের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। তারা আরও দাবি করেন, “সরকারি প্রতিষ্ঠানকে মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।”

বিক্ষোভকারীরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা আটকে রাখেন এবং একাধিক পথ অবরোধ করেন। তাদের দাবি ছিল, প্রশাসন যেন দ্রুত সেতুর সংস্কারের জন্য পদক্ষেপ নেয় এবং ভবিষ্যতে আর এমন দুর্ঘটনা না ঘটে।

৪. প্রশাসনিক পদক্ষেপ: রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরবর্তী পরিকল্পনা

এদিকে, কোচবিহার জেলা প্রশাসনের তরফে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির উদ্দেশ্য হলো সেতু ধসের মূল কারণ খুঁজে বের করা এবং ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, তার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা।

কোচবিহারের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, সেতুর অবস্থা পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, “স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা আমাদের প্রথম লক্ষ্য। সেতু সংস্কারের জন্য দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। আমাদের লক্ষ্য, কোচবিহারে ভবিষ্যতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটুক।” তবে এখনো সঠিক সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি।

প্রশাসন জানাচ্ছে, সেতু সংস্কারের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করা হবে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ সংস্কার কাজ শেষ করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। সেইসাথে, সেতু সংস্কারের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া হবে।

news image
আরও খবর

৫. সেতু সংস্কার: কি কাজ হবে?

কোচবিহার সেতু সংস্কারের সময় নিম্নলিখিত কিছু কাজ সম্পন্ন হবে:

  • সেতুর কাঠামোগত অবস্থা পর্যালোচনা ও শক্তিশালীকরণ।

  • সেতুর বিয়ারিংস এবং পয়েন্টসমূহের পরিবর্তন।

  • স্টিল পোর্টাল বিম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশের পুনঃনির্মাণ।

  • সেতুতে নিরাপত্তা উন্নয়ন, যাতে যাত্রীদের চলাচলে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে।

এছাড়াও, সেতুর প্রতি সঠিক নজরদারি রাখতে সেতুর উপর উন্নত প্রযুক্তি সংযোগ করা হবে, যেমন সেতুর প্রতিটি অংশের তাপমাত্রা, চাপ এবং অন্যান্য অবস্থা মনিটর করা।

৬. সেতু ধসের ফলে অর্থনৈতিক প্রভাব এবং শহরের জীবনযাত্রা

কোচবিহারের সেতু ধসে শহরের অর্থনৈতিক জীবনযাত্রা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে। সেতু ভেঙে পড়ার কারণে একদিকে যেমন শহরের যানবাহন চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে ব্যবসায়ী, কৃষক, পণ্য পরিবহণকারী এবং অন্যান্য লোকজনও সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
উদাহরণস্বরূপ, যারা দৈনিক বাজারজাতকরণের জন্য হাওড়া বা কলকাতা যেতে নিয়মিত সেতু ব্যবহার করতেন, তাদের জন্য বিকল্প রুটে চলাচল করা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, মালবাহী ট্রাকগুলোর জন্য বিকল্প রুটের ব্যবস্থাও যথেষ্ট সংকুচিত হয়ে গেছে, যা অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

৭. ভবিষ্যতে কী করা উচিত?

কোচবিহারের সেতু ধসের ঘটনায় একাধিক শিক্ষা মিলেছে। সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যা করা উচিত, তা প্রশাসন এখন বুঝতে পারছে। ভবিষ্যতে যেন এমন দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে:

  1. নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি আরও মনোযোগ: সেতুর প্রতি আরও মনোযোগী হওয়া, নিয়মিত পরিদর্শন ও সংস্কারের কাজ করা।

  2. পরিকল্পিত উন্নয়ন: শহরের সেতু-ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সেগুলির পুনঃনির্মাণ পরিকল্পনা করা।

  3. জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি: সেতুর অবস্থা সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা এবং তাদের নিরাপত্তার প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা।

৮. জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমাধানের দিকে একটি পদক্ষেপ

একটি জরুরি বিষয়, যেটি এই ঘটনায় উঠে এসেছে, তা হলো সাধারণ মানুষের সচেতনতা। কোচবিহারের সেতু ধসের ঘটনা থেকে এটি স্পষ্ট যে, মানুষ যদি রক্ষণাবেক্ষণ এবং সেতুর অবস্থা সম্পর্কে জানতেন, তাহলে তারা সরকার এবং প্রশাসনের প্রতি তাদের দাবি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারতেন।

সেইসাথে, সরকারকে অবশ্যই সেতু নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যাপক উন্নতি করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা আর না ঘটে।

উপসংহার: দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং ভবিষ্যত ব্যবস্থা

কোচবিহারের সেতু ধস শুধু একটি দুর্ঘটনা ছিল না, এটি একটি বড় শিক্ষা এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু যা রাজ্য এবং শহরের সেতু-নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাকে নতুনভাবে দেখতে সাহায্য করেছে। সরকার, প্রশাসন এবং জনসাধারণের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।

পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, সেতুর নিরাপত্তা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ সুনিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও মসৃণ এবং নিরাপদ হবে। সেতুর সংস্কার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কোচবিহারে একটি নতুন যুগের শুরু হবে, যেখানে আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না এবং সকলেই নিরাপদভাবে যাতায়াত করতে পারবেন।

Preview image