রাশিয়া ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আবারও গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় যুক্ত হতে চলেছে, কারণ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দিল্লিতে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করবেন। দুই দেশের মধ্যে decades-long কৌশলগত অংশীদারিত্ব, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, বাণিজ্য বৃদ্ধি, জ্বালানি নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত বিনিময় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সমন্বয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। দুই দেশের সম্পর্ক বরাবরই দৃঢ়, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের সবচেয়ে বড় অংশীদার রাশিয়া। সামরিক সরঞ্জাম, প্রযুক্তি ট্রান্সফার, যৌথ উৎপাদন এবং ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা প্রকল্প নিয়ে এই বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের 'মেক ইন ইন্ডিয়া' প্রকল্পের সাথে সামরিক খাতে রাশিয়ার সহযোগিতা আরও কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, সেটাও আলোচনার একটি বড় অংশ হতে পারে। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কও এই আলোচনার আরেকটি প্রধান দিক। রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানির পরিমাণ গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সমন্বয়কে আরও গভীর করেছে। পুতিন ও মোদি এই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি, পেমেন্ট সিস্টেম সহজীকরণ, রুপি-রুবল লেনদেন ব্যবস্থা এবং জ্বালানি সরবরাহের স্থায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দুই দেশ যে বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থাকে সমর্থন করে, সেই বিষয়ে তাদের পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার হবে এই আলোচনার মাধ্যমে। ইউক্রেন সংঘাত, বৈশ্বিক খাদ্য ও জ্বালানি সংকট, ব্রিকস সম্প্রসারণ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও মতবিনিময় হবে বলে কূটনৈতিক মহলে অনুমান। ভারত-রাশিয়া সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক বন্ধনের কথাও এই সফরে নতুন করে তুলে ধরা হবে। দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করার লক্ষ্যে শিক্ষা, পর্যটন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং মহাকাশ গবেষণার মতো ক্ষেত্রেও নতুন সহযোগিতা চুক্তির ঘোষণা আসতে পারে। সব মিলিয়ে, পুতিন ও মোদির এই দিল্লি শীর্ষ বৈঠক শুধু দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেই আরও শক্তিশালী করবে না, বরং আন্তর্জাতিক পরিসরে নতুন কূটনৈতিক বার্তাও দেবে। বৈঠকের ফলাফল ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশ করবে এবং বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতেও এর প্রভাব স্পষ্টভাবে পড়বে। hort description in 500 words
ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুত্ব বহু দশকের পুরনো। সোভিয়েত যুগ থেকেই এই দুই দেশের সম্পর্ক শুধু কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে ছিল না, বরং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যিক স্তরেও গভীর প্রভাব ফেলেছে। সেই দীর্ঘ ঐতিহ্যের উপর দাঁড়িয়েই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবারও দিল্লি সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে। এই বৈঠককে কেবলমাত্র সাধারণ কূটনৈতিক সাক্ষাৎ হিসাবে দেখা হচ্ছে না—এটি বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
বর্তমান সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধ, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা, জ্বালানি সংকট, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য নিরাপত্তা, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন—এসব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি অস্থির ও অনিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে ভারত ও রাশিয়া উভয়ই নতুন সম্ভাবনার সন্ধানে কাজ করছে, পাশাপাশি নিজেদের কৌশলগত শক্তিকে আরও মজবুত করছে। তাই দিল্লিতে পুতিন-মোদির শীর্ষ বৈঠক একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হল প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। গত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে ভারতের সামরিক সরঞ্জামের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে। ভারতীয় বায়ুসেনার মিগ ও সুখোই বিমান, নৌসেনার যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক—সবই রাশিয়ান প্রযুক্তির উপর নির্ভর করেছে।
এই বৈঠকে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হতে পারে:
ভারত ইতিমধ্যেই রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের প্রথম ধাপ গ্রহণ করেছে। এর বাকি অংশ সরবরাহের সময়সূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে।
রাশিয়া ভারতের সাথে যৌথভাবে হেলিকপ্টার, রাইফেল, ইঞ্জিন ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করতে আগ্রহী। এই বৈঠকে নতুন যৌথ প্রকল্পের ঘোষণা আসতে পারে।
ভারত-রাশিয়ার যৌথ উদ্ভাবন ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে এক বিশেষ পরিচিতি তৈরি করেছে। এর উৎপাদন বাড়ানো এবং রপ্তানি নিয়ে আলোচনা হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ড্রোন প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, হাইপারসনিক অস্ত্র—এ সব ক্ষেত্রেও দুই দেশ নতুন সমঝোতায় আসতে পারে।
সামরিক সহযোগিতায় রাশিয়া বরাবরই ভারতের প্রথম সারির অংশীদার। পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ থাকা সত্ত্বেও ভারত ও রাশিয়া নিজেদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে বহুমুখী ও স্থিতিশীল রাখতে আগ্রহী।
রাশিয়া বর্তমানে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া তাদের অপরিশোধিত তেল এশিয়ার দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়িয়েছে। ভারতও স্বল্পমূল্যে রাশিয়ান তেল আমদানি করে নিজেদের অভ্যন্তরীণ জ্বালানি খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে।
দুই দেশই ডলার নির্ভরতা কমাতে চায়। তাই রুপি-রুবল মুদ্রা লেনদেন ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে থাকবে।
রাশিয়া ভারতকে সরাসরি গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। ভারতও দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস চুক্তিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বিগত বছরে ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আগামী বছরে এটি দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
রাশিয়া থেকে ভারতের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে ব্যবহৃত কয়লা ও কৃষিখাতে ব্যবহৃত সার আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বের ভূরাজনৈতিক স্থানে বড় পরিবর্তন হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য—সব অঞ্চলের রাজনীতি নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে। এই অবস্থায় ভারত ও রাশিয়া নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ অনুযায়ী সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী।
ভারত যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে এবং শান্তির পথ খুঁজতে আহ্বান জানিয়ে আসছে। রাশিয়া ভারতের অবস্থানকে সম্মান করে। মোদি-পুতিন বৈঠকে যুদ্ধের পরিণতি এবং ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর আলোচনা হবে।
ব্রিকস আগামী বিশ্ব অর্থনীতির নতুন স্তম্ভ হিসেবে উঠছে। ভারত-রাশিয়া দুজনেই ব্রিকসকে আরও শক্তিশালী করতে আগ্রহী।
ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রচার করে। রাশিয়া ভারতের ভূমিকাকে সমর্থন করে, যদিও এই অঞ্চল নিয়ে রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি চীনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দুই দেশই মনে করে যে বিশ্বকে আর একক পরাশক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত নয়। তাই তারা বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থা গঠনে সহযোগিতা করছে।
ভারত ও রাশিয়া বহু বছর ধরে মহাকাশ গবেষণায় একসাথে কাজ করছে। চন্দ্রযান থেকে গগনযান প্রকল্প—সব ক্ষেত্রেই রাশিয়ার প্রযুক্তি ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী।
ভারতের প্রথম মানব-সহ মহাকাশ মিশনের জন্য রাশিয়ার প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সাহায্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তামিলনাড়ুর কуданকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভারত-রাশিয়া সহযোগিতার এক বড় উদাহরণ। ভবিষ্যতে আরও ইউনিট স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
সাইবার নিরাপত্তা, রোবোটিক্স, ৫জি-৬জি প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—এ সব ক্ষেত্রেই নতুন সমঝোতা আসছে।
ভারতীয় সংস্কৃতি রাশিয়ায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। বলিউড সিনেমা, যোগব্যায়াম, ভারতীয় খাদ্য—সবই রাশিয়ায় বড় দর্শকশ্রেণি তৈরি করেছে।
রাশিয়া প্রতি বছর বহু ভারতীয় ছাত্রকে মেডিক্যাল শিক্ষার সুযোগ দেয়। নতুন স্কলারশিপ প্রকল্প ঘোষণা হতে পারে।
দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হবে।
পুতিন ও মোদির এই বৈঠক থেকে যা আশা করা হচ্ছে:
নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি
জ্বালানি সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি
রুপি-রুবল বাণিজ্য চালু শক্তিশালী হওয়া
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যৌথ অবস্থান
মহাকাশ গবেষণায় নতুন প্রকল্প
ব্রহ্মোস মিসাইল রপ্তানির নতুন দেশ
নতুন সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা অংশীদারিত্ব
এই বৈঠক ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, যা আগামী দশকে দুই দেশের কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
পুতিনের এই দিল্লি সফর শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক নয়; এটি বিশ্ব রাজনীতির নতুন চিত্র আঁকতে চলেছে। ভারত তার স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতিকে বজায় রেখে রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চাইছে। অন্যদিকে রাশিয়াও ভারতের মতো একটি উদীয়মান বৈশ্বিক শক্তিকে পাশে রাখতে আগ্রহী। তাই এই শীর্ষ বৈঠক দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ককে আরও অর্থবহ ও শক্তিশালী করে তুলবে।
পুতিন ও মোদির এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শুধু ভারত-রাশিয়া সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে তা নয়—এটি নতুন ভূরাজনৈতিক ব্লকের জন্মের পথও খুলে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বর্তমানে পৃথিবীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ, অপরদিকে চীন এশিয়ায় নিজের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত এমন একটি রাষ্ট্র যা পশ্চিমা বিশ্ব, রাশিয়া এবং এশীয় শক্তিগুলোর সাথে সমানভাবে যোগাযোগ বজায় রাখতে সক্ষম। ফলে পুতিন-মোদির বৈঠক আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন কৌশলগত ভারসাম্য তৈরি করতে পারে।
ভারত স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে, যা "স্ট্র্যাটেজিক অটোনমি" নামে পরিচিত। এই নীতি অনুযায়ী ভারত কোনো শক্তি গোষ্ঠীর প্রতি একপেশে নির্ভরশীল নয়। রাশিয়া ভারতের এই অবস্থানকে সম্মান করে এবং এটিকে নিজেদের স্বার্থের জন্যও উপকারী মনে করে। ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া যখন নতুন বাণিজ্যিক অংশীদার খুঁজছে, তখন ভারত রাশিয়ার জন্য একটি স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য বাজার।
মোদির সাথে পুতিনের বৈঠকে ভারতের এই স্বাধীন অবস্থানের প্রশংসা আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। রাশিয়া ভারতের মতো একটি দেশের মাধ্যমে বৈশ্বিক রাজনীতিতে নিজের কণ্ঠস্বর আরও শক্তিশালী করতে চায়। এছাড়া ভারতও চায় বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থা গঠনে রাশিয়ার সহযোগিতা।
এই বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। আফগানিস্তান পরিস্থিতি, পাকিস্তান প্রশ্ন, মধ্য এশিয়ার সন্ত্রাসবাদ সমস্যা, এবং এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব বাড়ার বিষয়গুলি দুই দেশের আলোচনার কেন্দ্রে থাকতে পারে।
ভারত মনে করে মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার প্রভাব এখনো অত্যন্ত শক্তিশালী, আর রাশিয়া মনে করে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের নেতৃত্ব অপরিহার্য। ফলে দুই দেশ এই দুই অঞ্চলে যৌথভাবে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করতে পারে।
ভারত-রাশিয়া বাণিজ্যকে আরও দ্রুত এবং কম খরচে পৌঁছে দিতে INSTC একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এই রুটের মাধ্যমে রাশিয়া এবং ইউরোপ থেকে পণ্য ইরান হয়ে সরাসরি ভারতের পশ্চিম উপকূলে পৌঁছাতে পারে। এই করিডরের উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও সম্প্রসারণ—এগুলো পুতিন ও মোদির আলোচনার বড় অংশ হতে পারে।
INSTC পুরোপুরি চালু হলে ভারত-রাশিয়া বাণিজ্য দ্বিগুণ গতিতে বাড়তে পারে এবং এশিয়া-ইউরোপ বাণিজ্যে ভারত একটি বড় কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
বর্তমান বিশ্বে ডিজিটাল ইকোনমি দ্রুত প্রসারিত হয়েছে। ভারতের UPI (Unified Payments Interface) বিশ্বের অন্যতম সফল ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যাবস্থায় পরিণত হয়েছে। রাশিয়া ভারতীয় এই প্রযুক্তি নিজেদের দেশে ব্যবহার করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। একইভাবে রাশিয়ার মির পেমেন্ট সিস্টেম এবং ভারতের রুপে কার্ড সিস্টেমকে আন্তঃসংযোগ করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এছাড়া ব্লকচেইন প্রযুক্তি, ডিজিটাল রুবল, সাইবার নিরাপত্তা এবং তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যৌথ বিনিয়োগ দুই দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে পারে।
রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম গম, সার এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক দেশ। ভারত কৃষি উৎপাদনে বড় দেশ হলেও কখনও কখনও সার ও কাঁচামালের ঘাটতিতে সমস্যায় পড়ে। রাশিয়া থেকে সার আমদানি বৃদ্ধি, কৃষি প্রযুক্তির বিনিময়, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কৃষি নিরাপত্তা নিয়ে যৌথ গবেষণা—এসব বিষয়ও আলোচনায় আসতে পারে।
ভারত রাশিয়া থেকে সুলভ মূল্যে সূর্যমুখী তেল আমদানি করে থাকে। পুতিন-মোদির এই বৈঠকে খাদ্য নিরাপত্তার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হতে পারে।
সাংস্কৃতিক বিনিময়, ছাত্র বিনিময়, যৌথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প, ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র—এগুলো দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ককে আরও গভীর করে তুলতে পারে। বৈঠকে নতুন শিক্ষা চুক্তি, মেডিক্যাল শিক্ষায় আসন বৃদ্ধি, এবং পর্যটন প্রচারের মতো বিষয়ও আলোচনায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাশিয়ায় ভারতীয় সংস্কৃতি, বলিউড, যোগব্যায়াম এবং ভারতীয় খাবার অত্যন্ত জনপ্রিয়। সেই জনপ্রিয়তার উপর ভিত্তি করে নতুন সাংস্কৃতিক উৎসব, মিউজিয়াম বিনিময় এবং মিডিয়া সহযোগিতার প্রকল্পও ঘোষণা হতে পারে।