Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

রায়পুরে দ্বিতীয় ওয়ানডে: ওয়াশিংটন সুন্দর নাকি নীতিশ রেড্ডি? শিশিরই সিদ্ধান্ত নেবে একাদশ

ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচের আগে রায়পুরে দলের চূড়ান্ত একাদশ নিয়ে বড় আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ওয়াশিংটন সুন্দর নাকি নীতিশ কুমার রেড্ডি কার জায়গা হবে প্লেইং ইলেভেনে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। দলের সিদ্ধান্ত অনেকটাই নির্ভর করবে রায়পুরের মাঠে শিশিরের উপস্থিতির উপর। যদি ম্যাচে শিশিরের প্রভাব বেশি থাকে, তাহলে ভারতের পক্ষে স্পিনারদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যাবে। এমন অবস্থায় বোলিং অলরাউন্ডার নীতিশ রেড্ডিকে নেওয়া দলের জন্য কার্যকর হতে পারে, কারণ তার পেস বোলিং ও শক্তিশালী ব্যাটিং দুটিই কাজে আসবে। অন্যদিকে যদি শিশির কম হয় এবং স্পিনাররা গ্রিপ পেতে পারেন, তাহলে ওয়াশিংটন সুন্দরই ভারতের সেরা অপশন। পাওয়ারপ্লেতে তার টাইট অফ স্পিন এবং ব্যাটিংয়ে ফিনিশিং ক্ষমতা তাকে আরও উপযোগী করে তোলে। দলের ভেতরেও দুজনকে নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা রয়েছে, কারণ দুজনই ভিন্ন ধরনের সুবিধা এনে দিতে পারেন। রায়পুরের পিচ সাধারণত ব্যাটিং বান্ধব হলেও সন্ধ্যার দিকে শিশির বাড়লে বোলারদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে ম্যাচ শুরুর সময় পিচ ও আবহাওয়ার চূড়ান্ত রিপোর্ট জানার পরই ভারত সিদ্ধান্ত নেবে। দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজের মোড় ঘোরানো ম্যাচ, তাই সঠিক একাদশ নির্বাচনই হবে ভারতের সাফল্যের চাবিকাঠি।

রায়পুরে দ্বিতীয় ওয়ানডে: ওয়াশিংটন সুন্দর নাকি নীতিশ রেড্ডি? শিশিরই সিদ্ধান্ত নেবে ভারতের 'প্লেয়িং ইলেভেন' ও ম্যাচের ভাগ্য

১.  সূচনা: অলরাউন্ডার বিতর্ক ও রায়পুরের রণনীতি

ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজটি এখন এক চরম উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তে এসে দাঁড়িয়েছে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি রায়পুরের শেখরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, এবং এই ম্যাচের আগে ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমে সবচেয়ে বড় কৌশলগত বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে—স্পিন-অলরাউন্ডার ওয়াশিংটন সুন্দর নাকি পেস-অলরাউন্ডার নীতিশ কুমার রেড্ডি—কার জায়গা হবে চূড়ান্ত একাদশে?

এই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে শুধুমাত্র একটি প্রাকৃতিক উপাদানের ওপর: শিশির (Dew)। আধুনিক ক্রিকেটে, বিশেষ করে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে, শিশির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ 'এক্স-ফ্যাক্টর', যা কোচিং স্টাফ এবং অধিনায়কের পরিকল্পনা রাতারাতি বদলে দিতে পারে। রায়পুরের পিচ বিশ্লেষণ, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপের শক্তি-দুর্বলতা এবং শিশিরের সম্ভাব্য তীব্রতা—এই সবকিছু বিবেচনা করেই ভারতের কৌশল নির্ধারিত হবে। এই সিদ্ধান্ত কেবল একাদশের একটি স্থান নির্ধারণ করবে না, বরং ম্যাচের ফল এবং সিরিজের গতিপথ নির্ধারণেও মুখ্য ভূমিকা নেবে।

২.  শিশির কেন রায়পুরের ম্যাচের সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর?

শিশির, বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে, ক্রিকেট ম্যাচের পরিকল্পনায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। ওয়ানডে ক্রিকেটে যখন একটি দল ৩০০+ রান তাড়া করে, তখন শিশির ব্যাটিং দলকে বিশাল সুবিধা দেয় এবং বোলারদের কাজকে দুর্বিষহ করে তোলে।

২.১. শিশিরের প্রত্যক্ষ প্রভাব:

ক্ষেত্র শিশির পড়লে প্রভাব কৌশলগত তাৎপর্য
স্পিন বোলিং টার্ন ও গ্রিপ কমে যায়, বল ভিজে স্লিপারি হয় স্পিনারদের কার্যকারিতা প্রায় $50\%$ কমে যায়।
ব্যাটসম্যান বল ব্যাটে সহজে আসে, সুইং কম থাকে বাউন্ডারি মারা সহজ হয়, রান তাড়া করা সুবিধাজনক হয়।
পেস বোলিং ইয়র্কার ও স্লোয়ার বল গ্রিপ করা কঠিন হয় স্কিড বাড়ার কারণে ব্যাটসম্যান বেশি ভুল করতে পারে, তবে বৈচিত্র্য আনা কঠিন হয়।
ফিল্ডিং ক্যাচ ও থ্রো করা কঠিন মিসফিল্ডের সংখ্যা বাড়ে, অতিরিক্ত রান খরচ হয়।

যদি দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাপক শিশির পড়ে, তবে স্পিন বোলিং হয়ে পড়ে প্রায় অকার্যকর। এই কারণেই ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে একজন স্পিন-অলরাউন্ডারকে বাদ দিয়ে একজন পেস-অলরাউন্ডারকে খেলানোর কথা বিবেচনা করতে হচ্ছে, যিনি তুলনামূলকভাবে কম শিশির-প্রভাবিত।

৩.  ওয়াশিংটন সুন্দর: স্পিন-কন্ট্রোলারের গুরুত্ব ও দুর্বলতা

ওয়াশিংটন সুন্দর তার অফ-স্পিন এবং নির্ভরযোগ্য ব্যাটিংয়ের কারণে ভারতীয় দলের জন্য বহু বছর ধরেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তিনি একজন স্মার্ট ও 'কন্ট্রোলড' বোলার, যিনি পাওয়ারপ্লেতে বোলারদের জন্য প্রয়োজনীয় 'রিদম কন্ট্রোলার' হিসেবে কাজ করেন।

৩.১. সুন্দরের মূল শক্তি ও কৌশলগত ব্যবহার:

  • পাওয়ারপ্লেতে অফ-স্পিন: সুন্দর নতুন বলে টাইট লাইন-লেন্থ বজায় রেখে ব্যাটসম্যানদের সহজে রান তুলতে দেন না। বিশেষত বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে তার অফ-স্পিন কার্যকর।

  • ব্যাটিংয়ে স্থিরতা: লোয়ার মিডল অর্ডারে তার ব্যাটিং শান্ত, হিসেবি এবং প্রয়োজনে আক্রমণাত্মক হতে পারে।

  • বোলিংয়ের সুষমতা: সুন্দর খেললে ভারতের বোলিং আক্রমণে স্পিন ও পেসের একটি সুষম মিশ্রণ তৈরি হয়।

৩.২. সুন্দরকে না নেওয়ার প্রধান কারণ:

শিশির। রায়পুরে যদি দ্বিতীয় ইনিংসে নিশ্চিত শিশির পড়ে, তবে সুন্দরকে খেলাতে বাধ্য হলে তার প্রধান অস্ত্র (স্পিন) ভোঁতা হয়ে যাবে। তখন তাকে একজন সীমিত ওভারের সাধারণ ব্যাটসম্যান হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে, যা দলের মূল উদ্দেশ্য নয়।

৪.  নীতিশ কুমার রেড্ডি: নতুন যুগের পেস-অলরাউন্ডার ও ভবিষ্যতের সম্পদ

নীতিশ কুমার রেড্ডি আইপিএল থেকে উঠে আসা এক প্রতিশ্রুতিশীল প্রতিভা। তিনি একজন সত্যিকারের পেস-অলরাউন্ডার, যিনি ভারতের জন্য ভবিষ্যতের সম্পদ হতে পারেন।

৪.১. নীতিশের শক্তি ও রায়পুরে তার প্রয়োজনীয়তা:

  • পেস-অলরাউন্ডারের ভারসাম্য: নীতিশ প্রায় ১৩৫–১৪০ কিমি গতিতে বোলিং করতে পারেন। এই গতি স্পিনারের চেয়ে শিশিরে কম প্রভাবিত হয় এবং দ্রুতগতির পিচে কার্যকর হতে পারে।

  • পাওয়ার হিটিং: তিনি ব্যাট হাতে একজন শক্তিশালী স্ট্রোক-প্লেয়ার এবং লোয়ার অর্ডারে দ্রুত বড় ছক্কা মেরে ফিনিশিং দিতে সক্ষম।

  • দ্বি-মুখী উপকার: নীতিশ খেললে ভারতের বোলিং অপশন (৪ পেসার + ১ স্পিনার) বাড়ছে এবং ব্যাটিং গভীরতাও বাড়ছে।

৪.২. নীতিশকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণ:

news image
আরও খবর

শিশির থাকলে পেসাররা এবং পেস-ভিত্তিক অলরাউন্ডাররা বেশি কার্যকর হন। নীতিশ তার মিডিয়াম-ফাস্ট পেস দিয়ে মাঝের ওভারেও বোলিংয়ের শক্তি বাড়াতে পারেন, যা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে সর্বদা প্রয়োজন। তিনি ভারতের 'প্ল্যান-এ' হতে পারেন যদি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে শিশির নিশ্চিত হয়।

৫.  রায়পুরের পিচ বিশ্লেষণ ও শিশিরের পূর্বাভাস

রায়পুরের শেখরী স্টেডিয়ামের পিচ ঐতিহাসিকভাবে ব্যাটিং-বান্ধব। এখানে বড় রান তাড়া করা তুলনামূলকভাবে সহজ।

৫.১. পিচ ও পরিবেশের চরিত্র:

  • ব্যাটিং সহায়ক: পিচ দ্রুতগতির, যেখানে সিম এবং সুইং কম সাহায্য পায়।

  • পেসারদের সুবিধা: পেসাররা এখানে গতি এবং স্কিড থেকে সুবিধা পেতে পারেন।

  • শিশিরের সময়: আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, সন্ধ্যার পর তাপমাত্রা কমলে স্টেডিয়ামে শিশির পড়ার সম্ভাবনা প্রায় ৭০-৮০%।

যদি দ্বিতীয় ইনিংসে শিশির পড়ে, তবে স্পিনারের বোলিং খুবই কঠিন হয়ে পড়বে এবং রান তাড়া করা দলের জন্য তা বিশাল সুবিধা দেবে। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট এই কারণেই "We will take the final call after checking dew around 6:00 PM." বলে জানিয়েছে। ম্যাচ শুরুর ঠিক এক ঘণ্টা আগে আউটফিল্ড এবং পিচের পরিস্থিতি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

৬.  দক্ষিণ আফ্রিকার বিবেচনায় একাদশ নির্বাচন

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। তাদের টপ অর্ডারে ডেভিড মিলার, হেনরিক ক্লাসেন, এবং এইডেন মার্করামের মতো শক্তিশালী স্ট্রোক প্লেয়াররা আছেন।

৬.১. স্পিন বনাম পেস:

  • স্পিনের বিরুদ্ধে: দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা ঐতিহ্যগতভাবে পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে ভালো খেললেও, মাঝেমধ্যে ভারতীয় স্পিনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে দেখা যায়। কিন্তু যদি পিচে শিশির থাকে, তবে স্পিনের এই সুবিধা কাজে আসবে না।

  • পেসের বিরুদ্ধে: শক্তিশালী স্ট্রোক প্লেয়াররা পেস আক্রমণকে আক্রমণ করতে পারে। তবে অতিরিক্ত পেস বিকল্প থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ তৈরি করা সহজ হবে।

যদি শিশির নিশ্চিত হয়, তবে স্পিনার সুন্দরের চেয়ে পেস-অলরাউন্ডার নীতিশই ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে বেশি নিরাপদ পছন্দ। তার পেস বিকল্প ভারতের হাতে একটি অতিরিক্ত অস্ত্র তুলে দেবে।

৭.  চূড়ান্ত কৌশলগত সিদ্ধান্ত: সুন্দর বনাম রেড্ডি

দুজনের তুলনামূলক আলোচনা এবং পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, শিশিরের উপস্থিতিতে কে এগিয়ে থাকবেন:

ফ্যাক্টর ওয়াশিংটন সুন্দর (স্পিন) নীতিশ রেড্ডি (পেস) মন্তব্য
শিশিরে কার্যকারিতা ব্যাপকভাবে কমে যায় তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল নীতিশ রেড্ডি এগিয়ে
ফিনিশিং পাওয়ার ভালো, তবে পাওয়ার-হিটিং কম খুব ভালো পাওয়ার-হিটার নীতিশ রেড্ডি এগিয়ে
বোলিং বৈচিত্র্য স্পিন কন্ট্রোল গতি ও হার্ড লেন্থ পিচ পেস সহায়ক হওয়ায় নীতিশ এগিয়ে
অভিজ্ঞতা জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠিত তুলনামূলকভাবে নতুন সুন্দর এগিয়ে
সর্বোত্তম কম্বিনেশন ৩ পেস + ২ স্পিন ৪ পেস + ১ স্পিন রায়পুরের পিচে ৪ পেস বেশি কার্যকর

৭.১. ভারতের সেরা কম্বিনেশন:

  • ১. যদি শিশির থাকে (নীতিশ রেড্ডি নিশ্চিত): ভারত ৪ জন মূল পেসার (সিরাজ, আর্শদীপ, প্রসিদ্ধ + অতিরিক্ত মিডিয়াম পেস হিসেবে নীতিশ) এবং ১ জন স্পিনার (কুলদীপ যাদব) নিয়ে খেলবে। এটি ব্যাটিং গভীরতা এবং বোলিং শক্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।

  • ২. যদি শিশির না থাকে (ওয়াশিংটন সুন্দর সম্ভাব্য): ভারত ৩ জন মূল পেসার এবং ২ জন স্পিনার (কুলদীপ + সুন্দর) নিয়ে খেলবে, যা স্পিন কন্ট্রোল এবং মিডল ওভারে চাপ তৈরির জন্য আদর্শ।

৮.  সিরিজের প্রেক্ষাপট ও উপসংহার

দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়ের দিক থেকে উভয় দলের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত যদি এই ম্যাচ জেতে, তাহলে তারা সিরিজে এগিয়ে যাবে। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতলে সিরিজ সমতায় ফিরবে। রায়পুরের পিচ ব্যাটিং-বান্ধব হওয়ায় এই ম্যাচে ৩০০+ রান এবং একটি সফল রান তাড়া হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ভুল কম্বিনেশন ভারতের জন্য বড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত: রায়পুরের শিশিরই হবে ভারতের একাদশ নির্ধারণের 'ফাইনাল ফ্যাক্টর'। যদি আবহাওয়া এবং মাঠের পরিস্থিতি নিশ্চিত করে যে সন্ধ্যার পর শিশির ব্যাপক প্রভাব ফেলবে, তবে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট দ্বিধাহীনভাবে স্পিন-অলরাউন্ডার ওয়াশিংটন সুন্দরকে বসিয়ে পেস-অলরাউন্ডার নীতিশ কুমার রেড্ডিকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেবে। এটি হবে ঝুঁকি কমানোর এবং ম্যাচের কৌশলগত সুবিধা নেওয়ার এক বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ।

Preview image