বর্ধমান বয়েজ স্কুল আজ একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে, যখন রাজবিহারী এর উদ্যোগে স্কুলে শুরু হল ফুটবল খেলা। এই উদ্যোগে ফুটবলকে এক নতুন পরিচিতি দিতে এবং ছাত্রদের মধ্যে ক্রীড়া চেতনা জাগাতে সাহায্য করবে। আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের শিক্ষক, ছাত্র, এবং এলাকার ফুটবলপ্রেমীরা। ফুটবল খেলার আয়োজনের লক্ষ্য শুধু খেলাধুলা নয়, বরং ছাত্রদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশেও সহায়ক হওয়া। রাজবিহারী জানিয়েছেন, আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র প্রতিযোগিতা নয়, বরং ছাত্রদের মধ্যে দলগত কাজ, নেতৃত্বের গুণাবলী এবং শৃঙ্খলা গড়ে তোলা। এই খেলাটি তাদের মনোবল এবং সহযোগিতা বাড়াবে। উদ্বোধনী ম্যাচে স্কুলের ছাত্ররা নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শন করে দর্শকদের মন জয় করেছে। বর্ধমানের ফুটবল খেলোয়াড়দের জন্য এই উদ্যোগ একটি বড় সুযোগ, যেহেতু এখন তারা আরও নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের প্রতিভা বিকাশিত করতে পারবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বর্ধমান বয়েজ স্কুল নতুন প্রজন্মের ফুটবল তারকা তৈরির পথে এক বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। শিক্ষামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি খেলাধুলার গুরুত্ব তুলে ধরা এবং ছাত্রদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা, এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য।
— বর্ধমানের ক্রীড়া ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা —
বর্ধমান বয়েজ স্কুল, ১৮৭৫ সালেরও পূর্বে যার প্রতিষ্ঠা, শুধু এই শহরের নয়, সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের এক ঐতিহ্যবাহী ও প্রথিতযশা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ দেড় শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি জ্ঞান, বিদ্যা ও নৈতিক শিক্ষার পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আজ, ২০২৫ সালের এই বিশেষ দিনে, স্কুলটি তার ইতিহাসে এক নতুন ও রোমাঞ্চকর অধ্যায়ের সূচনা করলো— আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো স্কুলের নিজস্ব ফুটবল কার্যক্রম। এই উদ্যোগ শুধু শিক্ষাগত উৎকর্ষতার প্রতি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের অঙ্গীকারের পরিপূরক নয়, বরং ছাত্রদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি এক গভীর মনোযোগের পরিচায়ক।
বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ফুটবল খেলার এই শুভ সূচনা ঘটেছে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক এবং শিক্ষানুরাগী শ্রী রাজবিহারীর অদম্য উদ্যোগে। তিনি একাধারে যেমন একজন দূরদর্শী সমাজকর্মী, তেমনই ক্রীড়া বিকাশে তাঁর আগ্রহ প্রশ্নাতীত। তাঁর নেতৃত্বেই এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়িত হয়েছে, যা স্থানীয় যুব সমাজের মধ্যে শারীরিক সুস্থতা এবং দলগত চেতনার গুরুত্বকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করেছে।
ফুটবল কেবল একটি খেলা নয়; এটি বিশ্বজনীন আবেগ, যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে একত্রিত করে। এই খেলা জীবনের নানা চ্যালেঞ্জের প্রতিচ্ছবি— যেখানে জয়-পরাজয়, সংগ্রাম, কৌশল এবং দলগত ঐক্যই প্রধান। আজকের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের শিক্ষকমণ্ডলী, উৎসাহিত ছাত্রদল, প্রাক্তন ছাত্ররা এবং এলাকার বহু ফুটবলপ্রেমী মানুষ। স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং রাজবিহারীর স্পষ্ট বার্তা ছিল: এই উদ্যোগের লক্ষ্য কেবল একটি খেলার পরিবেশ তৈরি করা নয়, বরং ছাত্রদের মধ্যে শৃঙ্খলা, আত্মবিশ্বাস, এবং খেলাধুলার মাধ্যমে দলগত কাজ শেখানো।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক, ডঃ অমর্ত্য রায় (কাল্পনিক চরিত্র), তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে এই উদ্যোগকে "বর্ধমান বয়েজ স্কুলের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত" হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, “আমাদের স্কুলের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। আমরা সবসময় বিশ্বাস করি যে একটি সুস্থ মস্তিষ্ক কেবল একটি সুস্থ শরীরেই থাকতে পারে। ফুটবল খেলার এই সূচনা সেই বিশ্বাসকে আরও সুদৃঢ় করলো। আমরা রাজবিহারী মহাশয়কে ধন্যবাদ জানাই তাঁর এই দূরদর্শী পরিকল্পনার জন্য।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে, একটি সুসজ্জিত মার্চ পাস্টের মাধ্যমে ছাত্ররা তাদের নতুন জার্সি প্রদর্শন করে, যা স্কুলের চিরাচরিত নীল ও সাদা রঙের সমন্বয়ে তৈরি। এরপর, আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠের মাঝখানে ফিতা কেটে খেলার সূচনা করা হয়। ছাত্ররা এদিন স্কুলের মাঠে প্রথম প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচে অংশ নেয়, যা তাদের দক্ষতা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনার ঝলক দেখায়। যদিও এটি একটি প্রাথমিক ম্যাচ ছিল, তবে ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল চোখে পড়ার মতো, যা প্রমাণ করে এই খেলার প্রতি তাদের আগ্রহ কতটা গভীর। এই নবসূচনা যেন বর্ধমানের ক্রীড়াঙ্গনে এক নতুন জাগরণের পূর্বাভাস দিলো।
শ্রী রাজবিহারী, এই উদ্যোগের প্রধান স্থপতি, তাঁর বক্তব্যে ফুটবলের শিক্ষাগত ও সামাজিক গুরুত্ব নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি জানান, এই পরিকল্পনাটি দীর্ঘদিনের চিন্তাভাবনার ফল। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল শুধু শহরের ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ানো নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে শারীরিক কসরত এবং খেলার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা।
তাঁর ভাষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল: “আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র প্রতিযোগিতা বা ট্রফি জেতা নয়, বরং ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী, কঠিন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, শৃঙ্খলা, এবং দলের প্রতি সহানুভূতি গড়ে তোলা। ফুটবল খেলা ছাত্রদের শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।” তিনি আরও দৃঢ়তার সঙ্গে জানান যে, ভবিষ্যতে এই উদ্যোগের মাধ্যমে এলাকার আরও প্রতিভাবান ফুটবল খেলোয়াড় উঠে আসবে, যারা স্থানীয়, রাজ্য এমনকি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের নাম প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তাঁর এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, এই উদ্যোগ কেবল একটি স্কুলের কার্যক্রম নয়, বরং বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনের একটি ভিত্তি।
২.১. ফুটবল খেলার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যসমূহ (The Defined Objectives):
রাজবিহারীর দর্শন অনুযায়ী, ফুটবল খেলার উদ্দেশ্যকে কয়েকটি মূল স্তম্ভে বিভক্ত করা হয়েছে:
শারীরিক দক্ষতা বৃদ্ধি (Physical Fitness Enhancement): ফুটবল একটি উচ্চ-তীব্রতার খেলা, যা শরীরের প্রায় সমস্ত পেশী এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সক্রিয় করে তোলে। এর মাধ্যমে ছাত্ররা শারীরিকভাবে সুস্থ, শক্তিশালী এবং রোগমুক্ত থাকবে। নিয়মিত অনুশীলন তাদের স্ট্যামিনা ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করবে।
দলগত কাজ ও নেতৃত্বের গুণাবলী (Teamwork & Leadership): ফুটবল একটি দলভিত্তিক খেলা, যেখানে প্রতিটি খেলোয়াড়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্ররা এই খেলার মাধ্যমে শিখবে কিভাবে দলের সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হয়, ব্যর্থতার দায়ভার ভাগ করে নিতে হয় এবং কিভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে নেতৃত্ব দিতে হয়। একজন গোলরক্ষক থেকে শুরু করে স্ট্রাইকার পর্যন্ত প্রত্যেকের ভূমিকাই এখানে নেতৃত্বের ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশ।
আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক স্থিতিশীলতা (Confidence & Mental Resilience): একটি প্রতিযোগিতামূলক খেলা হিসেবে ফুটবল ছাত্রদের আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবে। তারা জানবে কিভাবে চাপের মুখে শান্ত থাকতে হয়, চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় এবং কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের দাঁড় করানো যায়। গোল করার আনন্দ বা গোল হজম করার হতাশা - উভয়ই তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখাবে।
সামাজিক সম্পর্ক ও সংহতি (Social Bonding & Cohesion): খেলাধুলা ছাত্রদের মধ্যে দ্রুত সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। তারা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানবে, বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের ছাত্রদের মধ্যে সহযোগিতার অনুভূতি বাড়বে, যা ভবিষ্যতের জীবনে সংহতি সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
শিক্ষা কেবল বই এবং শ্রেণীকক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাবিদরা দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বাস করেন যে খেলাধুলা ছাত্রদের জীবনে এমন কিছু দক্ষতা যোগ করে যা আনুষ্ঠানিক পাঠ্যক্রম দিতে পারে না।
৩.১. শৃঙ্খলা ও সময়ের মূল্য (Discipline and Value of Time):
ফুটবল একটি খেলা যা কঠোর শৃঙ্খলা এবং সময়ের প্রতি সম্মান দাবি করে।
সময়ানুবর্তিতা: মাঠে সময়মতো উপস্থিত থাকা, প্র্যাকটিস সেশনগুলিতে নিয়মিত অংশ নেওয়া এবং ম্যাচের নির্ধারিত সময়সীমা মেনে চলা—এসবই ছাত্রদের সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব শেখায়।
নিয়ম মেনে চলা: খেলার নিয়মাবলী ও রেফারির সিদ্ধান্ত মেনে চলার বাধ্যবাধকতা তাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত আইন ও নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়। খেলার মাঠে শৃঙ্খলা বজায় রাখা তাদের ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়ক হবে।
৩.২. মনোবল এবং আত্মবিশ্বাসের উন্নতি (Improvement in Morale and Self-Confidence):
ফুটবল খেলার মাধ্যমে ছাত্ররা তাদের শারীরিক, মানসিক এবং আবেগগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে শেখে।
হার না মানা মনোভাব: একটি ম্যাচে পিছিয়ে পড়ার পরও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার যে মানসিকতা, তা ছাত্রদের জীবনেও কঠিন পরিস্থিতিতে হার না মানতে শেখায়।
নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন: ফুটবলে প্রতিপক্ষকে টেকনিক্যালি হারাতে হয়, যা ছাত্রদের শেখায় কিভাবে নিজেদের আগ্রাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে ইতিবাচক ফল লাভ করা যায়।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তন কৃতি ফুটবলার, অধ্যাপক শ্যামল সেনগুপ্ত (কাল্পনিক চরিত্র), যিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তিনি মন্তব্য করেন: “ফুটবল হলো চলমান নীতিশাস্ত্রের পাঠশালা। এটি শুধু গোল দেওয়া-নেওয়া নয়, বরং জীবনের মাঠে কীভাবে একজন ভালো মানুষ হিসেবে বাঁচতে হয়, সেই শিক্ষাও দেয়। প্রতিবার যখন একটি পাস ভুল হয়, বা একটি গোল মিস হয়, ছাত্ররা তখনই শেখে যে ভুল স্বীকার করে কীভাবে আবার চেষ্টা করতে হয়—যা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলির মধ্যে একটি।”
বর্ধমান বয়েজ স্কুলের এই নতুন উদ্যোগে ছাত্র ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। তাদের প্রতিক্রিয়াগুলি ছিল আবেগপূর্ণ এবং আশাবাদী।
৪.১. ছাত্রদের উচ্ছ্বাস:
নবম শ্রেণির ছাত্র, আবির দাস (কাল্পনিক), যে প্রথম দিনেই মাঠে নিজের প্রতিভা দেখিয়েছে, সে জানালো: “আমাদের স্কুলে ফুটবল শুরু হওয়ায় আমি সত্যিই খুব খুশি। এতদিন শুধু ক্রিকেট বা অন্যান্য খেলার চর্চা হতো। এবার আমরা আমাদের প্রিয় খেলাটি খেলার সুযোগ পেলাম। আমার স্বপ্ন জাতীয় দলের হয়ে খেলা। এই উদ্যোগ আমার প্রথম ধাপ।”
দশম শ্রেণির ছাত্র, শুভম রানা (কাল্পনিক), যে রক্ষণভাগে খেলে, সে দলগত কাজের গুরুত্ব তুলে ধরে: “ফুটবল আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে অন্যের উপর ভরসা করতে হয়। ক্লাসে সবাই হয়তো আলাদা, কিন্তু মাঠে আমরা একটা দল। রাজবিহারী স্যারের কথাগুলো আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।”
৪.২. অভিভাবকদের প্রত্যাশা:
ছাত্রদের বাবা-মায়েরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, এটি তাদের সন্তানদের সুষম বিকাশে সাহায্য করবে।
শোভা দেবী (কাল্পনিক), একজন অভিভাবক, বলেন: “আমার ছেলে সারাদিন শুধু মোবাইল নিয়ে থাকত। আমি ভয় পেতাম ওর শারীরিক সুস্থতা নিয়ে। এখন স্কুল থেকে ফুটবল খেলার সুযোগ পাওয়ায় ও নিয়মিত মাঠে যাচ্ছে। খেলাধুলা ওর মনকে শান্ত রেখেছে, আর পড়াশোনাতেও মনযোগী হয়েছে।”
অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় (কাল্পনিক), আরেকজন অভিভাবক, মন্তব্য করেন: “রাজবিহারী এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনেক ধন্যবাদ। আমার মনে হয়, এই ধরণের উদ্যোগের ফলেই ভবিষ্যতের ভালো খেলোয়াড়রা উঠে আসবে। শুধু ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার নয়, একজন ভালো ক্রীড়াবিদ হওয়াও সমাজের জন্য গর্বের বিষয়।”
বর্ধমান শহর ঐতিহাসিকভাবেই ক্রীড়াপ্রেমী। তবে প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে ফুটবলের এমন সুসংগঠিত উদ্যোগ এক নতুন দিগন্তের সূচনা করল। রাজবিহারী জানিয়েছেন যে, এই উদ্যোগটি শুধু স্কুলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।
ভবিষ্যতে স্কুলের ফুটবল প্রোগ্রামকে আরও বৃহত্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে:
আন্তঃ-স্কুল টুর্নামেন্ট: আগামী বছর থেকে 'রাজবিহারী স্মারক কাপ' (কাল্পনিক) নামে একটি বার্ষিক আন্তঃ-স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যেখানে বর্ধমান জেলার অন্যান্য স্কুলগুলিও অংশগ্রহণ করবে।
পেশাদার কোচিং ও ট্রেনিং ক্যাম্প: ছাত্রদের জন্য নিয়মিত পেশাদার কোচিং সেশন এবং গ্রীষ্মকালীন ট্রেনিং ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হবে। এর মাধ্যমে ছাত্ররা দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হতে সক্ষম হবে।
প্রতিভা অন্বেষণ (Talent Scouting): স্কুলের মাধ্যমে একটি প্রতিভা অন্বেষণ প্রোগ্রাম চালু করা হবে, যা গ্রামীণ এলাকা থেকে প্রতিভাবান কিন্তু সুযোগবঞ্চিত খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করে সঠিক প্রশিক্ষণ দেবে।
ফুটবলের মাধ্যমে বর্ধমানের ক্রীড়াঙ্গনে যে প্রভাব পড়বে, তা বহুমাত্রিক। এটি কেবল ফুটবলকেই নয়, অন্যান্য খেলার প্রতিও আগ্রহ বাড়াবে এবং যুব সমাজের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা, সম্মান এবং বন্ধুত্বের বোধ সৃষ্টি করবে। এই উদ্যোগের সফলতা বর্ধমানের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও একই ধরণের পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রাণিত করবে, যা সামগ্রিকভাবে রাজ্যের ক্রীড়া মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।
যেকোনো বড় উদ্যোগে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। বর্ধমান বয়েজ স্কুলের এই ফুটবল যাত্রাপথেও কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, যার সমাধান এই উদ্যোগের স্থায়িত্বের জন্য অপরিহার্য।
৬.১. চ্যালেঞ্জসমূহ:
পর্যাপ্ত অবকাঠামো: বর্ধমান বয়েজ স্কুলের মাঠ ঐতিহ্যবাহী হলেও, নিয়মিত প্রশিক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক মানের গ্রাউন্ড ও আনুষঙ্গিক সুবিধা (যেমন জিমনেসিয়াম, পরিবর্তন কক্ষ) তৈরি করা প্রয়োজন।
অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব: নিয়মিত কোচিং, টুর্নামেন্ট আয়োজন, এবং সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক মডেল প্রয়োজন। শুধুমাত্র অনুদান বা এককালীন অর্থসাহায্য যথেষ্ট নয়।
শিক্ষার সঙ্গে ভারসাম্য: ফুটবল খেলার প্রতি অত্যধিক মনোযোগ যেন ছাত্রদের একাডেমিক পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত না করে, সেই ভারসাম্য বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
৬.২. সামনের পথ:
রাজবিহারী এই চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে সচেতন এবং তিনি এর সমাধানের জন্য একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা তৈরি করেছেন। তিনি স্থানীয় কর্পোরেট সংস্থা, প্রাক্তন ছাত্র সমিতি এবং ক্রীড়া মন্ত্রকের সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন করে একটি 'স্পোর্টস এনডাওমেন্ট ফান্ড' গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এই ফান্ডের মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং কোচিং স্টাফদের পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, "আমরা চাই, এখান থেকে ভালো ফুটবল খেলোয়াড় বেরিয়ে আসুক, যারা ভবিষ্যতে রাজ্য বা জাতীয় স্তরে খেলার সুযোগ পাবে। কিন্তু তার আগে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে খেলাধুলা তাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি না করে। বরং এটি যেন তাদের সার্বিক বিকাশের সহায়ক হয়।"
বর্ধমান বয়েজ স্কুলের ফুটবল খেলার সূচনা কেবল একটি ক্রীড়া কার্যক্রমের উদ্বোধন নয়, বরং এটি দূরদর্শিতা, সামাজিক অঙ্গীকার এবং শিক্ষামূলক মূল্যবোধের এক মিলনক্ষেত্র। এই মহৎ উদ্যোগটি শুধু স্কুলের ছাত্রদের জন্য নয়, বরং সমগ্র বর্ধমান শহরের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।
শ্রী রাজবিহারীর নেতৃত্বে এই নতুন দিগন্তের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই ফুটবল প্রোগ্রাম নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরতে সাহায্য করবে এবং শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা, শৃঙ্খলা এবং নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশে সহায়তা করবে।
এই উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে বর্ধমানের ক্রীড়া ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে। আজকের এই সূচনা ভবিষ্যতে অসংখ্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় তৈরির ভিত্তি স্থাপন করবে। বর্ধমান বয়েজ স্কুল প্রমাণ করলো যে শিক্ষা ও খেলাধুলা একে অপরের পরিপূরক, যা একটি জাতিকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
এইভাবে, একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী, সুশৃঙ্খল এবং শারীরিকভাবে সক্ষম প্রজন্ম তৈরির মাধ্যমে, বর্ধমান বয়েজ স্কুল কেবল স্কুলের ঐতিহ্যকেই নয়, বরং ক্রীড়াঙ্গনেও তার নাম উজ্জ্বল করবে। রাজবিহারীর এই স্বপ্নপূরণের মাধ্যমে বর্ধমান শহর বিশ্ব ক্রীড়াক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুত।