Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

ভারতে কার্যকর হলো নতুন শ্রমবিধি শ্রমিক অধিকার ও কর্মসংস্থানে নতুন যুগের সূচনা

ভারত একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অতিক্রম করেছে   ২১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে দেশব্যাপী চারটি নতুন শ্রমবিধি (লেবার কোড) কার্যকর করা হয়েছে, যা পুরাতন ২৯টি শ্রম আইনকে একত্রিত করে একটি আধুনিক, সংহত ও কার্যকর কাঠামো গড়ে তুলেছে। এই কোডগুলোর লক্ষ্য শুধু আইনি নিয়মকে সহজ করা নয়, বরং শ্রমিকদের সুরক্ষা বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা সম্প্রসারণ এবং শিল্পের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোও। নতুন শ্রমবিধিগুলোর মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। কোড অন ওজেস  তাদের জন্য একটি জাতীয় নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করছে, যাতে দেশে কোনো কর্মীই অত্যন্ত কম পারিশ্রমিক না পায়।  এছাড়া, এখন প্রতিটি কর্মীকে নিয়োগপত্র  প্রদান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা চাকরির শর্ত এবং সুযোগ-সুবিধাকে আরও স্বচ্ছ করে তুলবে। গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের জন্য এই পরিবর্তন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। নতুন কোডগুলো গিগ ইকোনমিকে আইনি স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং তাদের সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা যেমন পেনশন, বীমা বা স্বাস্থ্য-সেবা–প্রদান করার পথ খুলে দিচ্ছে।  পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কোড (Social Security Code) তাদের জন্য নেটওয়ার্ক প্রসারিত করছে, তাদের কর্মজীবনকে স্থায়ী করার দিকে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ সম্পর্কিত কোড (Occupational Safety, Health and Working Conditions Code) শ্রমিকদের কাজের স্থানে নিরাপদ শর্ত নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। বড় প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং ফ্যাক্টরি ও কারখানার ক্ষেত্রে মানসম্মত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়মাবলী প্রবর্তন করা হচ্ছে।  শ্রমিক নিয়োগকর্তার মধ্যে শ্রমিক সম্পর্ক এবং সংঘর্ষ  নিয়ন্ত্রণ করার জন্য Industrial Relations Code তৈরি করা হয়েছে। কোডটি শ্রমিক ও ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ দুটোই বিবেচনায় রাখে: এটি শ্রমিকদের সংগঠন গঠনের অধিকার শক্তিশালী করছে, এবং একই সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগ বা ছাটাইয়ে বেশি নমনীয়তা দিচ্ছে, যেমন কোম্পানিগুলো এখন ৩০০ জন কর্মীর সীমার মধ্যে সরকার অনুমোদন ছাড়াই ছাটাই করতে পারবে।  তাছাড়া, নতুন পরিদর্শন ব্যবস্থাও এসেছে Inspector-cum-Facilitator যারা শুধু নিয়ন্ত্রণ নয়, পরামর্শ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম মেনে চলতে পারে।  শ্রমিয় বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য কোডে দ্রুত এবং সহজ প্রক্রিয়া সংযোজন করা হয়েছে, যেমন দুই-সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। নারী শ্রমিকদের জন্যও এতে বিশেষ সুযোগ রয়েছে। নতুন কোড নারীদের রাতের শিফটে কাজ করার অধিকার দিচ্ছে, যদি নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনা করা হয়; পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন ছুটিও সম্প্রসারিত করা হয়েছে। কোডগুলোর মাধ্যমে দৃষ্টিকোণ আরও লিঙ্গ-নিরপেক্ষ করা হয়েছে, এবং “সম-মূল্য কাজের জন্য সম-বেতন” নীতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।  অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এই শ্রমবিধি সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যবসাগুলোর জন্য নিয়ন্ত্রক ভার কমাচ্ছে, কারণ একাধিক আইনকে চারটি কোডে সংযুক্ত করার ফলে প্রশাসনিক জটিলতা কমে যাবে।  একই সঙ্গে, শ্রমিকদের জন্য একটি নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক এবং ভবিষ্য-উপযোগী কাজের পরিবেশ গড়ে তুলবে, যা ভারতকে “ভিক্সিত ভারত” গড়া ও সামাজিক অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।  তবে এই পরিবর্তন সমালোচনাও পেয়েছে। কিছু শ্রম ইউনিয়ন ও কার্যকলাপকারীরা দাবি করছে যে নতুন কোড শ্রমিকদের অধিকার দুর্বল করতে পারে, বিশেষ করে ছাঁটাই ও কাজের সময় নিয়ে।  তবুও, সরকার এই নিয়মগুলোকে “পরামর্শমূলক” ও “সহায়ক” হিসেবে উপস্থাপন করছে, এবং বলেছে যে এগুলো দীর্ঘমেয়াদে শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করবে।  সার্বিকভাবে, এই চারটি নতুন শ্রমবিধি ভারতের শ্রমনীতিকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে যাচ্ছে। এটি শ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণকে শক্তিশালী করছে, একই সঙ্গে শিল্প ও অর্থনীতিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও আধুনিক করছে। এই রূপান্তর ভারতকে ভবিষ্য-উপযোগী এবং মানব-মুখী শ্রমবাজার গঠনে একটি মাইলফলক হিসেবে দাঁড় করাবে।                  

ভারতে কার্যকর হলো নতুন শ্রমবিধি শ্রমিক অধিকার ও কর্মসংস্থানে নতুন যুগের সূচনা
সমাজ সেবা

ভারতের শ্রমনীতিতে গত একাধিক দশকে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে যখন ২১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে দেশব্যাপী চারটি নতুন শ্রমবিধি কার্যকর করা হলো। এই শ্রমবিধি বা লেবার কোডগুলোর প্রবর্তন শুধু আইনগত সংশোধন নয়, বরং এটি এক নতুন দিগন্তের সূচনা, যা শ্রমিকদের অধিক সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছে। এই পরিবর্তন পুরাতন, অনেক সময় জটিল ও বিভেদপূর্ণ শ্রম আইনের প্রায় ২৯টি কেন্দ্রীয় আইনকে একত্রিত করে একটি সমন্বিত কাঠামোর দিকে এগিয়েছে, যা ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং ভবিষ্যতের কাজের ধরণকে প্রতিফলিত করে। 

এই চারটি কোড যথাক্রমে হলো কোড অন ওয়েজেস (Code on Wages, ২০১৯), ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস কোড (Industrial Relations Code, ২০২০), সোশ্যাল সিকিউরিটি কোড  এবং ওকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশন কোড (OSHWC Code, ২০২০)।  সরকার বলেছে যে এই কোডগুলি পুরোনো আইনগুলোর জটিলতা কমাবে, নিয়ম-অনুবর্তনকে সহজ করবে এবং একই সঙ্গে শ্রমিক এবং নিয়োগকর্তা উভয় পক্ষের জন্য একটি আধুনিক, নির্ভরযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রম পরিবেশ গড়ে তুলবে। 

নতুন শ্রমবিধিগুলোর সবচেয়ে বড় প্রভাব হলো শ্রমিক অধিকারগুলোর প্রসারণ এবং সামাজিক নিরাপত্তার ব্যাপকীকরণ। কোড অন সোশ্যাল সিকিউরিটি শ্রমিকদের জন্য পেনশন, বিমা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, গ্র্যাচুইটি (প্রত্যাহার ভাতা) এবং কর্মীদের জন্য অন্যান্য সচেতনতামূলক প্রণালী স্থাপন করে। বিশেষভাবে গুরুত্ব রয়েছে গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের ক্ষেত্রে  তাদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা হয়েছে, যা পূর্বে অনেকেই উপেক্ষা করত। কোড অন ওয়েজেস কর্মীদের জন্য সর্বনিম্ন মজুরি বা ন্যাশনাল ফ্লোর ওয়েজ  নির্ধারণ করেছে, যা অঞ্চলের পার্থক্য মেটাতে এবং খুব কম মজুরি পাওয়ার প্রবণতা কমাতে সহায়ক হতে পারে। 

আকাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠান‑নিয়োগ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে নতুন কোডে নিয়োগপত্র  বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যে কোনো কর্মীর জন্য নিয়োগপত্রে তার পদ, দায়িত্ব, মজুরি এবং সামাজিক সুরক্ষা অধিকার স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে, যা শ্রমিক ও নিয়োগকর্তার মধ্যে বোঝাপড়াকে মজবুত করবে। 

নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য‑পরিস্থিতিতে নতুন আইনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। OSHWC কোড কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ শর্ত প্রতিষ্ঠা করতে ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা প্রদান করে, এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেফটি কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক করে। শ্রমিকদের কাজের সময়, বিশ্রামের সুযোগ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়গুলোর দিকে নতুন দৃষ্টিকোণ এসেছে। 

শ্রমিক এবং নিয়োগকর্তার সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধ নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস কোড বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই কোড শ্রমিক সংগঠন গঠন, স্ট্রাইক, লকআউট এবং পুনর্নিয়োগ‑বিরোধ সমাধানের নিয়ম নির্ধারণ করে। এটি একদিকে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার সুরক্ষা করে, অন্যদিকে নিয়োগকর্তার জন্য নির্দিষ্ট কাঠামোতে প্রতিযোগীতা ও নমনীয়তা নিশ্চিত করে। বিশেষত কোম্পানিগুলোর জন্য নিয়োগ এবং ছাটাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু নমনীয়তা দেওয়া হয়েছে — উদাহরণস্বরূপ, নতুন নিয়ম অনুযায়ী একোক প্রতিষ্ঠানে ৩০০ কর্মীর সীমার মধ্যে সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া ছাঁটাই সম্ভব, যা পুরানো সীমার তুলনায় বড় পরিবর্তন। 

জেন্ডার সমতা ও নারী শ্রমিকদের অধিকারেও নতুন কোড গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। নতুন বিধান অনুমোদন করে যে নারীরা সম্মতি ও নিরাপত্তার শর্তে রাতের শিফটে কাজ করতে পারে।  এছাড়া, কোড নারী কর্মীদের জন্য একই কাজের জন্য একই বেতন নীতির ওপর জোর দিয়েছে, এবং গঠনতান্ত্রিক গঠন যেমন গ্রিভেন্স রিড্রেসাল কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। 

নিয়োগ নির্বাহী দৃষ্টিকোণ থেকেও এই রিফর্ম একটি বড় সুযোগ। নতুন কোডগুলোর মাধ্যমে নিয়োগকর্তারা একক প্যান-ইন্ডিয়া লাইসেন্স পেতে পারবে যা পাঁচ বছরের জন্য কার্যকর হবে, এবং একবার লাইসেন্স পেলে তারা অনেক সহজে বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে পারবে।  এছাড়া, নিয়ম সোজা করার জন্য ইনস্পেক্টর-কাম-ফ্যাসিলিটেটর স্থাপন করা হয়েছে, যাদের কাজ শুধুমাত্র পরিদর্শনকারী হিসেবে নয় বরং পরামর্শদাতা হিসেবেও থাকবে যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম মেনে চলে এবং শ্রমিকদের আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। 

অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে, এই শ্রমবিধি রূপান্তর ভারতকে একটি ভবিষ্যত উপযোগী অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কোডগুলোর মাধ্যমে আইনগত বহุลতার পরিবর্তে একক কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, যা কোম্পানিগুলোর প্রশাসনিক ভার কমাতে সহায়তা করবে।  একই সঙ্গে, শ্রমিকদের অধিক সামাজিক সুরক্ষা এবং নিয়মানুবর্তিতা তাদের জীবনের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করবে এবং তাদের কাট-পড় স্বীকৃতি ও অধিকার নিশ্চিত করবে। 

তবে এই পরিবর্তন সবকিছুর জন্য ইতিবাচকই নাও হতে পারে সমালোচনার ঝড়ও আছে। কিছু দেশীয় শ্রম ইউনিয়ন এবং কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এই কোডগুলিকে শ্রমিকবিরোধী হিসেবে অভিহিত করেছে এবং ২৬ নভেম্বর ব্যাপক প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। তারা বলেছে যে কোডগুলোর বেশ কিছু বিধান শ্রমিকদের অধিকার সংকুচিত করতে পারে, বিশেষ করে স্ট্রাইক করার অধিকার, ছাঁটাই নীতিতে নমনীয়তা এবং কাজের সময় বৃদ্ধির প্রস্তাবনায় উদ্বেগ রয়েছে

অন্য দিকে, সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে এই সংস্কার দীর্ঘমেয়াদে শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মন্তব্য করেছেন যে এই কোডগুলি শ্রমিকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার এক শক্তিশালী ভিত্তি গড়বে, তাদের মজুরি সময়মতো দেয়ার নিশ্চয়তা দেবে এবং একটি সুরক্ষিত কর্মপরিবেশ গঠনে সহায়তা করবে, বিশেষত নারী ও যুব কর্মীদের জন্য। 

বিভিন্ন শ্রেণির কর্মীদের ওপর এই কোডগুলোর প্রভাব ভিন্ন হবে। অর্গানাইজড হিসেবে যারা কাজ করে, তারা কোডগুলোর সুবিধা  যেমন পারিশ্রমিক সময়মতো পাওয়া, সামাজিক সুরক্ষা, নিয়োগপত্র  থেকে লাভবান হবে। একই সঙ্গে অর্গানাইজড খাতে যারা গিগ বা কন্ট্রাক্ট-ভিত্তিক কাজে যুক্ত, তারা এখন আইনগত স্বীকৃতি পাবে এবং তাদের নিরাপত্তা বলবৎ হবে। বিশেষভাবে ভাঙন ধরেছে যে পূর্বে অনেক গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীর সামাজিক সুরক্ষা ছিল না; নতুন কোড তাদের পেনশন, বিমা ও অন্যান্য সুবিধা দান করার পথ খুলেছে। 

news image
আরও খবর

নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকেও কোডগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। কর্মস্থলে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা মানদণ্ড অত্যাধুনিককরণের দিকে এগিয়েছে। ইনস্পেকশন মেকানিজম আরও কার্যকর করা হয়েছে এবং কাজের সময়, ওভারটাইমের জন্য নতুন বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, বিশেষ শ্রমিক গোষ্ঠীর জন্য যেমন মাইগ্র্যান্ট শ্রমিক, নারীরা, কন্ট্রাক্ট ও দর-কাম শ্রমিকদের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাগুলো ইনক্লুসিভিটি বাড়াবে। 

সমগ্র শ্রমবাজার এবং শিল্প‑পর্যায়ে এই কোডগুলোর প্রয়োগ কার্যকরভাবে একটি “ভবিষ্য-প্রস্তুত কর্মশক্তি” গঠনের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য কেবল শ্রম আইন হালনাগাদ করা নয়, বরং একটি সার্বজনীন এবং প্রগতিশীল শ্রমনীতি গড়ে তোলা, যা শিল্পকে আরও প্রতিযোগী করতে পারে এবং পাশাপাশি শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ, স্থায়ী ও মর্যাদাপূর্ণ কাজের সুযোগ তৈরি করতে পারে। 

এই রূপান্তর সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যখন গিগ ইকোনমি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যখন অনিয়মিত ও কন্ট্রাক্ট শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে, তখন একটি আধুনিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রম আইন কাঠামো কর্মশক্তির সুরক্ষা এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অপরিহার্য। নতুন কোডগুলি এই চাহিদাকে সাড়া দিচ্ছে, এবং এমন একটি আইনগত ভিত্তি তৈরি করছে যা ভারতকে বৈশ্বিক মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শ্রম বাজার গঠন করতে সহায়তা করবে।

সার্বিকভাবে দেখা যায়, ভারতের নতুন শ্রমবিধি শুধুমাত্র আইনগত পরিবর্তন নয়, এটি একটি দৃষ্টান্তমূলক সামাজিক বলা যায়  শ্রমিক অধিকারকে শক্তিশালী করার, নিরাপদ কর্মক্ষেত্র গড়ার, এবং দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থানের ভিত্তি তৈরি করার একটি প্রচেষ্টা। যদিও সমালোচনা রয়েছে, কিন্তু যদি সফলভাবে এই কোডগুলোর বাস্তবায়ন হয়, তাহলে এটি ভারতের শ্রমনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে এবং শ্রমিকদের জীবনে একটি নতুন আশা ও মর্যাদার অধ্যায় খুলে দিতে পারে।

এই নতুন শ্রমবিধির যুগে, শ্রমিকরা তাদের অধিকারের জন্য আরও সচেতন হবে, এবং নিয়োগকর্তারা দায়িত্বশীলভাবে কর্মসংস্থান পরিচালনা করবে। একদিকে প্রচলিত আইনগুলোর গোলযোগ দূর হবে, অন্য দিকে সামাজিক নিরাপত্তা এবং কাজের ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে  এবং এভাবে ভারত একটি এমন শ্রম-বাজার গড়াবে, যেখানে কর্মশক্তি শুধু উৎপাদনশীলই হবে না, বরং মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদও থাকবে।


 

 

 

 

 

 

Preview image