২০১৬ সালে ওবামা প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছিল, ভাষাগত দক্ষতার অভাবে ট্রাকচালকদের চাকরি থেকে সরানো যাবে না। কিন্তু ট্রাম্প সরকার সেই নিয়ম বাতিল করায় ইংরেজি না-জানা বহু চালক, বিশেষ করে ভারতীয়রা, এখন কর্মহীন হওয়ার মুখে।
আমেরিকায় ইংরেজি জানেন না, তাই কাজ হারালেন প্রায় ৭০০০ ট্রাকচালক — সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতীয়রাই
আমেরিকায় বড়সড় ধাক্কা ট্রাকচালকদের জীবনে। ইংরেজি বলায় বা বুঝতে দক্ষ না হওয়ায় প্রায় ৭০০০ ট্রাকচালককে চাকরি থেকে সরিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ট্রাকচালকেরা।
আমেরিকার পরিবহণ সচিব সিন ডাফির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৭২৪৮ জন ট্রাকচালককে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাত্র কয়েক মাস আগেও, অর্থাৎ জুলাই মাসে, এই সংখ্যা ছিল ১৫০০। অর্থাৎ তিন মাসের মধ্যেই সংখ্যাটা পাঁচ গুণ বেড়েছে।
মূল কারণ— ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার অভাব। আমেরিকার পরিবহণ দফতরের (FMCSA) নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ট্রাকচালকদের অবশ্যই ইংরেজি বুঝতে, বলতে এবং নির্দেশ মানতে জানতে হবে। অন্যথায় তাঁদের কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
২০১৬ সালে বারাক ওবামার প্রশাসনে জারি হওয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, শুধুমাত্র ভাষাগত কারণে কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে না। কিন্তু সেই নিয়ম সম্প্রতি বাতিল করে দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে নতুন নিয়মে এখন ভাষা দক্ষতাই চাকরি টিকে থাকার মূল শর্ত হয়ে উঠেছে।
এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ভারতীয় ট্রাকচালকেরা। আমেরিকার ট্রাকচালক সংগঠন ‘নর্থ আমেরিকান পঞ্জাবি ট্রাকার্স অ্যাসোসিয়েশন (NAPTA)’ জানিয়েছে, বর্তমানে আমেরিকায় প্রায় দেড় লক্ষ ট্রাকচালক পঞ্জাব ও হরিয়ানার বাসিন্দা। তাঁদের অনেকেই ইংরেজিতে পুরোপুরি দক্ষ নন, ফলে তাঁরা এখন কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে সাম্প্রতিক কয়েকটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘিরে। গত কয়েক মাসে আমেরিকায় একাধিক বড়সড় পথদুর্ঘটনায় ভারতীয় ট্রাকচালকদের নাম জড়িয়ে যায়। সেই ঘটনাগুলির পরই ট্রাম্প প্রশাসন ট্রাকিং ইন্ডাস্ট্রিতে নিরাপত্তা নীতিমালা আরও কড়াভাবে প্রয়োগের নির্দেশ দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন নিয়ম ট্রাকচালকদের উপর এক বিশাল চাপ তৈরি করেছে। অনেকের বহু বছরের পরিশ্রম, লাইসেন্স, ও পরিবার এখন অনিশ্চয়তার মুখে। তবে প্রশাসনের যুক্তি— ভাষাগত দক্ষতা না থাকলে সড়কে নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব নয়। তাই আপসের কোনও জায়গা নেই।
ফলে এখন আমেরিকার হাইওয়েতে প্রশ্ন একটাই— ‘ইংরেজি না জানলে চাকরি কি টিকবে?’