Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

ইথিওপিয়ার সুপ্ত আগ্নেয়গিরির জাগরণ বিমান চলাচলে বড় ধরনের ব্যাঘাত

ইথিওপিয়ার পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত দীর্ঘদিন সুপ্ত থাকা একটি আগ্নেয়গিরি প্রায় ১০ হাজার বছর পর হঠাৎ অগ্নুৎপাত শুরু করায় পুরো অঞ্চলজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, এত দীর্ঘ সময় নীরব থাকার পর কোনো আগ্নেয়গিরির জেগে ওঠা বিরল এবং তা স্থানীয় পরিবেশ, ভূতাত্ত্বিক স্থিতি ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলতে পারে। এই অগ্নুৎপাতের ফলে আগ্নেয় মেঘ কয়েক কিলোমিটার উচ্চতায় উঠে গিয়ে আকাশপথে ছড়িয়ে পড়েছে, যা বিমানের টারবাইন ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি সৃষ্টি করে। ফলে ইথিওপিয়া ও আশপাশের কয়েকটি দেশের ওপর দিয়ে চলাচলকারী একাধিক আন্তর্জাতিক বিমান রুট সাময়িকভাবে বন্ধ বা পরিবর্তন করা হয়েছে। ইথিওপিয়ার জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দ্রুত আশপাশের বসতি এলাকা থেকে মানুষ সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এবং নিরাপত্তা জোন ঘোষণা করেছে। অনেক স্থানে আগ্নেয় ছাই জমে ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটেছে। স্থানীয়রা জানান, রাতের অন্ধকারে অগ্ন্যুত্পাতের আলো ও শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ভূকম্পনও অনুভূত হয়। বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের মাত্রা ও লাভার প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে পরিস্থিতির আরও অবনতির সম্ভাবনা যাচাই করছেন। ভূতাত্ত্বিকরা মনে করছেন, আগ্নেয়গিরিটির ভেতরে জমে থাকা চাপ দীর্ঘ সময় ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল, যা হঠাৎ মুক্তি পেয়ে বিস্ফোরণের সৃষ্টি করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভূকম্পন কার্যকলাপ বাড়লেও স্থানীয়রা বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পারেননি। এখন অগ্ন্যুত্পাতের ফলে দেশের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সংস্থা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা নিচ্ছে। অগ্নেয় ছাইয়ের কারণে আবহাওয়া হঠাৎ ধোঁয়াটে হয়ে পড়েছে, দৃষ্টিসীমা কমে গেছে, যা ভূমি পরিবহনেও প্রভাব ফেলছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘ সময় ছাইয়ের সংস্পর্শে থাকলে শ্বাসকষ্ট ও চোখের জ্বালাপোড়ার ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করছেন। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে ইতোমধ্যেই শ্বাসজনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে। এদিকে বিমান সংস্থাগুলো যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিকল্প রুট তৈরি করছে। কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সময় পরিবর্তন করেছে, আর কিছু ফেরত পাঠানো হয়েছে নিকটস্থ নিরাপদ বিমানবন্দরে। বৈশ্বিক বিমানসংস্থাগুলোও পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, কারণ আগ্নেয় ছাই জেট ইঞ্জিনের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। সব মিলিয়ে, ১০ হাজার বছর পর ইথিওপিয়ার এই আগ্নেয়গিরির জেগে ওঠা শুধু ভূতাত্ত্বিক ঘটনা নয় এটি একটি আঞ্চলিক মানবিক, পরিবেশগত ও বিমান চলাচল সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সবার প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

ইথিওপিয়ার সুপ্ত আগ্নেয়গিরির জাগরণ বিমান চলাচলে বড় ধরনের ব্যাঘাত
আন্তর্জাতিক সংবাদ

ইথিওপিয়ার পূর্বভাগে অবস্থিত সুপ্ত আগ্নেয়গিরিটি প্রায় দশ হাজার বছর পর হঠাৎ অগ্ন্যুত্পাত শুরু করলে গোটা অঞ্চলসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। আফ্রিকার রিফট ভ্যালি অঞ্চলে অবস্থিত এই আগ্নেয়গিরিটি বহু শতাব্দী ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল বলে ভূতাত্ত্বিকরা মনে করে আসছিলেন। গবেষণা নথিতে আগ্নেয়গিরিটির সর্বশেষ অগ্ন্যুত্পাতের উল্লেখ পাওয়া গেলেও তা মানুষের স্মৃতি, ইতিহাসের দলিল ও মৌখিক ঐতিহ্যের বাইরে চলে গেছে। ফলে এর অগ্ন্যুত্পাত আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীদের কাছে এক বিস্ময়কর, আবার একই সঙ্গে উদ্বেগজনক ঘটনা। প্রথম বিস্ফোরণের মুহূর্তে আগ্নেয়গিরির চূড়া থেকে অগ্নিগোলক আকাশে ছিটকে উঠতে দেখা যায়, রাতের অন্ধকার ফুটে ওঠে আগুনের লাল আলোয়, আর আশপাশের গ্রামগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় মানুষ অনেকেই প্রথমে বিষয়টিকে কোনো বৃহৎ বন্য আগুন বা বজ্রপাতের ঘটনা মনে করেছিলেন, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই তীক্ষ্ণ গন্ধযুক্ত সালফার ধোঁয়া ও ঘন কালো ছাই আকাশকে ঢেকে ফেললে তারা বুঝতে পারেন, প্রকৃতি তার সুপ্ত শক্তির ভয়াবহতা নিয়ে জেগে উঠেছে। আগ্নেয়গিরির মুখ থেকে নিরন্তর ছাই উড়তে থাকায় আকাশের রঙ দ্রুতই অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে একদিকে গাঢ় ধূসর, অন্যদিকে লালচে প্রতিফলন। সূর্যের আলোও মাঝ দিনের পর হঠাৎ ম্লান হয়ে যায়। বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে থাকা ছাই ও গ্যাস আলোকে বাধা দেওয়ায় দৃষ্টিসীমা কমে আসে, যা জনজীবন ও পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বিশেষত, আকাশে উচ্চমাত্রার ছাইয়ের মেঘ তৈরি হওয়ায় এলাকার ওপর দিয়ে চলাচলকারী বিমানগুলো মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ে, কারণ আগ্নেয় ছাই জেট ইঞ্জিনে প্রবেশ করলে তা ক্ষতিগ্রস্ত বা পুরোপুরি অকেজো হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

অগ্ন্যুত্পাত শুরু হতেই ইথিওপিয়ার বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ দ্রুত জরুরি সতর্কতা জারি করে, অঞ্চলটির ওপর দিয়ে যেসব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নিয়মিত যাতায়াত করত সেগুলোকে অবিলম্বে রুট পরিবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিছু আন্তঃমহাদেশীয় বিমানকে তাদের গন্তব্যের পরিবর্তে নিকটস্থ বিকল্প বিমানবন্দরে অবতরণ করতে বাধ্য করা হয়। যেসব ফ্লাইট ইতোমধ্যেই আকাশে ছিল, সেগুলোকে দীর্ঘঘণ্টা ঘুরে ঘুরে অপেক্ষা করতে হয় নিরাপদ রুট নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত। ফলে শত শত যাত্রীকে অপেক্ষা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে সময় কাটাতে হয়। বৈশ্বিক বিমান সংস্থাগুলোও ঘটনা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হয়, কারণ আগ্নেয় ছাই ছড়িয়ে পড়লে তা কেবল ইথিওপিয়ার ওপরই সীমাবদ্ধ থাকে না; বায়ুমণ্ডলের স্রোত এবং বায়ুর গতিবেগের উপর ভিত্তি করে তা দূরবর্তী অঞ্চল অবধিও পৌঁছে যেতে পারে।

এদিকে আগ্নেয়গিরির আশপাশের জনপদে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। স্বেচ্ছাসেবক দল ও সেনাবাহিনী গ্রামবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে শুরু করে। যারা যেতে অস্বীকার করছিলেন, তাদের বিপদের মাত্রা ব্যাখ্যা করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়োজিত করা হয়। অনেকেই তাদের ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, জমিজমা ও স্বজনদের রেখে যেতে চাইছিলেন না, কিন্তু প্রশাসন ও বৈজ্ঞানিক সংস্থার যৌথ তথ্য উপস্থাপনার পর তারা পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পারেন। যারা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করতেন, তাদের স্থানান্তর ছিল সবচেয়ে জরুরি, কারণ লাভার প্রবাহ দ্রুতগতিতে নেমে এসে বসতবাড়ি ও কৃষিজমি গ্রাস করতে পারে। লাভা যদিও প্রায়ই নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হয়, তবু ভূত্বকের পরিবর্তন, ছোট ভূকম্পন বা নতুন ফাটলের সৃষ্টি হলে তা ভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে, ফলে আশপাশের মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে।

বিজ্ঞানীরা অগ্ন্যুত্পাতের কারণ অনুসন্ধানে মাঠপর্যায়ে নেমে আসেন। গবেষণা কেন্দ্রগুলো ভূমিকম্পের মাত্রা, আগ্নেয়গিরির তাপমাত্রা, গ্যাস নির্গমন, ছাইয়ের রাসায়নিক গঠন এবং লাভার প্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রিফট ভ্যালির টেকটোনিক প্লেটগুলোর ধীরে ধীরে সরে যাওয়ার ফলে ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা চেম্বারে চাপ সঞ্চিত হয়েছিল। দীর্ঘ সময়ের নিষ্ক্রিয়তার পর সেই চাপ একসময় অত্যন্ত বেশি হয়ে যায়। এতে আগ্নেয়গিরির অভ্যন্তরে জমে থাকা গ্যাসের সম্প্রসারণ ও ম্যাগমার উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়, যা হঠাৎ বিস্ফোরণের দিকে নিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া সাধারণত বছর বা শতাব্দী ধরে চলতে পারে, কিন্তু কখন সুনির্দিষ্টভাবে বিস্ফোরণ ঘটবে তা পূর্বাভাস দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। এমনকি আধুনিক প্রযুক্তিও সবসময় সঠিক সময় নির্ধারণ করতে পারে না, বিশেষত যখন আগ্নেয়গিরিটি দীর্ঘসময় কোনো কার্যকলাপ দেখায় না।

অগ্ন্যুত্পাতের ফলে পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হতে বেশি সময় লাগেনি। ছাই জমে আশপাশের কৃষিজমির উপর স্তর তৈরি করে, যা ফসল ও মাটির উর্বরতার ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে। অনেক ক্ষেত্রেই ছাই পানি ও মাটির মিশ্রণে শক্ত স্তর তৈরি করে, যা জমি পুনরায় চাষ করা কঠিন করে তোলে। গবাদিপশুগুলো ছাইযুক্ত ঘাস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, অনেক জায়গায় পানির উৎসেও ছাই পড়ায় তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রামে পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়ছে, ফলে স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো পরিশোধিত পানি বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও এর প্রভাব পড়ছে। আগ্নেয় ছাইয়ের ক্ষুদ্র কণা ফুসফুসে প্রবেশ করলে তা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, চোখে জ্বালা, ত্বকের জ্বালা এবং দীর্ঘমেয়াদে নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে। স্থানীয় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করে, বিশেষত শিশু ও প্রবীণ নাগরিকদের মধ্যে শ্বাসজনিত সমস্যার প্রবণতা বেশি দেখা দেয়। স্বাস্থ্যকর্মীরা দ্রুত জরুরি চিকিৎসা শিবির স্থাপন করে, যেখানে মাস্ক, চোখের সুরক্ষা ওষুধ এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন সাধারণ মানুষকে ঘরের বাইরে কম বের হতে, বের হলেও মাস্ক ব্যবহার করতে এবং ঘরের জানালা দরজা বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে।

অগ্ন্যুত্পাতের শব্দও মানুষকে আতঙ্কিত করছে। আগ্নেয়গিরির অভ্যন্তরে গ্যাস বিস্ফোরণের কারণে মাঝে মাঝে প্রচণ্ড শব্দ শোনা যাচ্ছে, যা ভূমির ওপর চাপ সৃষ্টি করে ক্ষুদ্র ভূমিকম্প ঘটাচ্ছে। কিছু ঘরবাড়ি ফাটল ধরেছে, ছোট দোকানপাটের টিনের ছাদ কেঁপে উঠছে। দীর্ঘসময় এমন শব্দের মধ্যে বসবাস মানুষের মানসিক অবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলছে। অনেকের ঘুমের সমস্যা দেখা দিয়েছে, শিশুদের মধ্যে আতঙ্ক ও কান্না বেড়েছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে মানসিক চাপ স্বাভাবিক হলেও দীর্ঘস্থায়ী হলে তা মানসিক ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

এদিকে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলোও পরিস্থিতির দিকে নজর দিচ্ছে। আফ্রিকার রিফট ভ্যালি অঞ্চলের আগ্নেয়গিরিগুলো ভূ তাত্ত্বিক পরিবর্তনের অন্যতম চিহ্ন, যা পৃথিবীর অভ্যন্তরে চলমান প্রক্রিয়াগুলোর প্রতিফলন। তাই এই অগ্ন্যুত্পাত বিজ্ঞানীদের কাছে এক মূল্যবান গবেষণার ক্ষেত্র, যদিও এর সঙ্গে মানুষের জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি জড়িত। বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইট ও ড্রোনের সাহায্যে আগ্নেয়গিরির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন। বিশেষভাবে আগ্নেয় ছাইয়ের মেঘ কোন দিকে ছড়াচ্ছে তা নির্ধারণ করতে আবহাওয়াবিদরা কাজ করছেন, যাতে বিমান চলাচল নিরাপদ রাখা যায়।

news image
আরও খবর

অগ্ন্যুত্পাতের প্রেক্ষিতে ইথিওপিয়ার সরকার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছে। জরুরি ত্রাণ, খাদ্য, পানি, চিকিৎসা সামগ্রী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনে সাহায্য করার জন্য জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কয়েকটি দাতাসংস্থা ইতোমধ্যেই খাবার ও কম্বল বিতরণ শুরু করেছে। হাজার হাজার মানুষ স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার ও অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে জানেন না কবে ঘরে ফিরতে পারবেন, আর অনেকেই হয়তো আর কখনোই ফিরতে পারবেন না, কারণ লাভার প্রবাহ অনেক বাড়িঘর পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।

প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্যও দৃশ্যটি বিস্ময়কর। পৃথিবীর অভ্যন্তরে থাকা নিবিড় শক্তি ও তাপ যখন পৃষ্ঠভাগে বেরিয়ে আসে, তখন তার রূপ হয় ভয়ঙ্কর, আবার একই সঙ্গে মহিমান্বিত। কেউ কেউ দূর থেকে লাভার রঙিন প্রবাহ, উজ্জ্বল আলোকচ্ছটা আর কালো ধোঁয়ার মিশ্রণ দেখে বিস্মিত হন। কিন্তু এই সৌন্দর্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকে ধ্বংসের ছায়া, যা মানুষ ও প্রকৃতি উভয়ের ওপরই প্রভাব ফেলে।

আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ কতদিন চলবে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। কিছু আগ্নেয়গিরি কয়েক ঘণ্টা বিস্ফোরণ চালিয়ে থেমে যায়, আবার কিছু কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাস সক্রিয় থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগ্নেয়গিরিটির সাম্প্রতিক আচরণ দেখে মনে হচ্ছে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ম্যাগমা চেম্বারের তাপমাত্রা ও গ্যাসের চাপ দ্রুত কমছে না, বরং ধীরে ধীরে বাড়ছে। এতে বিস্ফোরণ আরও তীব্র হতে পারে এবং নতুন ফাটল সৃষ্টি হয়ে ভিন্ন ভিন্ন দিক দিয়ে লাভা বেরিয়ে আসতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে সমগ্র অঞ্চলটির জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। স্কুল বন্ধ, বাজার বন্ধ, কৃষিকাজ বন্ধ, এমনকি পশুপাখিরাও স্বাভাবিক আচরণ হারিয়ে ফেলেছে। প্রকৃতির পরিবর্তন তাদেরও অস্থির করেছে। অনেক পাখি ঝাঁক বেঁধে দূরে সরে গেছে। পশুপালকদের গবাদিপশু সরাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গ্রামের রাস্তাগুলো ছাইয়ের কারণে পিচ্ছিল হয়ে পড়ছে, ফলে যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদে এই অগ্ন্যুত্পাত অঞ্চলটির ভূপ্রকৃতি পরিবর্তন করবে। নতুন লাভা ঠাণ্ডা হয়ে জমাট বাঁধলে সেখানে নতুন শিলা গঠিত হবে। নদীর গতিপথ বদলে যেতে পারে, নতুন পাহাড় বা ছোট উঁচু ভূমি সৃষ্টি হতে পারে। ইতিহাস বলছে, পৃথিবীর বহু আগ্নেয়গিরি দ্বীপ, পর্বত ও উপত্যকা তৈরি করেছে। তাই এই অগ্ন্যুত্পাত একদিকে যেখানে মানুষের জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে তা পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক বিবর্তনের একটি স্বাভাবিক ও অনিবার্য অংশ।

চলমান দুর্যোগের মধ্যে সাধারণ মানুষ একে অপরকে সাহায্য করছে। প্রতিবেশীরা একসঙ্গে আশ্রয় নিচ্ছে, খাবার ভাগ করে খাচ্ছে, শিশুদের সান্ত্বনা দিচ্ছে। মানবিকতা কখনো দুর্যোগের সময়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, এবং এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অনেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন কেউ পানি পৌঁছে দিচ্ছেন, কেউ আহতকে হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন, কেউ আবার তথ্য প্রচার করে মানুষকে সচেতন রাখছেন।

ভবিষ্যতে এই আগ্নেয়গিরি আবার কবে অগ্ন্যুত্পাত করবে, তা জানা না গেলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন থেকে এর ওপর নজরদারি বাড়ানো হবে। উন্নত সিসমোগ্রাফ, গ্যাস বিশ্লেষণ যন্ত্র, স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ এবং ভূগর্ভস্থ সেন্সর বসানো হবে। এই অগ্ন্যুত্পাত মানুষকে শিক্ষা দিয়েছে প্রকৃতি যতক্ষণ নীরব থাকে, তা কখনোই সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ততার নিশ্চয়তা নয়।

ইথিওপিয়ার এই আগ্নেয়গিরির জেগে ওঠা শুধু একটি ভূতাত্ত্বিক ঘটনা নয় এটি মানুষের জীবন, পরিবেশ, অর্থনীতি, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সবকিছুকে একসঙ্গে প্রভাবিত করেছে। মানুষ হয়তো শিগগিরই ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ করবে, কৃষিজমি আবার চাষযোগ্য হবে, আকাশ আবার ছাইমুক্ত হবে; কিন্তু এই ঘটনার স্মৃতি দীর্ঘদিন তাদের মনে থাকবে। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কত নাজুক এবং পৃথিবীর অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা শক্তি কত প্রভাব বিস্তার করতে পারে, এই ঘটনাই তার একটি তীব্র স্মারক।

Preview image