হংকংয়ের অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪৪ জনের মৃত্যু এবং প্রায় ৩০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই আবাসনের ভিতরে আটকে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে
হংকঙের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড শুধু একটি দুর্ঘটনা নয় এটি সমগ্র শহরকে নাড়িয়ে দেওয়া এক গভীর শোকবহ ঘটনা সাতটি বহুতল আবাসনে লাগা আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে মুহূর্তের মধ্যে সেটি রূপ নেয় এক মৃত্যুকুণ্ডে এবং ভয় ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায় আগুন নেভাতে দমকল বাহিনীকে লড়াই করতে হয় দীর্ঘ সময় ধরে কারণ আগুন ছড়িয়ে পড়ে এক আবাসন থেকে আর এক আবাসনে এবং ভিতরে আটকে পড়েন বহু মানুষ
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত জানা গিয়েছে অন্তত ৪৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় ৩০০ জন যারা ঠিক কোথায় রয়েছেন এবং তারা আদৌ বেঁচে আছেন কি না তা নিশ্চিত ভাবে জানা যাচ্ছে না এই নিখোঁজ তালিকা যত বড় হচ্ছে ততই আতঙ্ক বাড়ছে সাধারণ মানুষের এবং শহরের প্রশাসনের কারণ আবাসনগুলির ভিতরে এখনও অনেকেই আটকে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দমকল কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে
এই ভয়াবহ ঘটনার পর তদন্তে নেমেছে হংকং পুলিশ এবং প্রাথমিক তদন্তেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে এই অগ্নিকাণ্ড নিছক একটি দুর্ঘটনা নয় বরং এটি ঘটেছে নির্মাণকাজে মারাত্মক অবহেলা ও গাফিলতির কারণে বহুতলগুলির নির্মাণের দায়িত্ব ছিল একটি বেসরকারি সংস্থার উপর এবং সেই সংস্থার একাধিক ত্রুটি ও অসচেতনতার ফলেই আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ করেছে পুলিশ
হংকং পুলিশের সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট আইলিন চুং জানিয়েছেন যে নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করেননি এবং তাঁদের অবহেলার কারণেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় নির্মাণকাজে ব্যবহৃত অনেক উপকরণই দাহ্য ছিল এবং সেগুলি এমন ভাবে রাখা হয়েছিল যা যে কোনও সময় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ডেকে আনতে পারে বাঁশের ভাড়ার গায়ে থাকা সবুজ জালিগুলিও ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের এবং সেগুলি আগুন ছড়িয়ে পড়ার গতি আরও বাড়িয়ে দেয়
পুলিশ তদন্তে উঠে এসেছে আরও অনেক তথ্য নির্মাণস্থলে কার্ডবোর্ড স্টাইরোফোম বোর্ড এবং থিনারের মতো দাহ্য পদার্থ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল যেগুলি কোনও নিরাপত্তা নিয়মের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় নিরাপত্তার নিয়ম না মানার ফলে আগুন মুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং একের পর এক টাওয়ারে তার বিস্তার ঘটে
সমগ্র হংকংয়ে গত সতেরো বছরে এত বড় অগ্নিকাণ্ড আর ঘটেনি ওয়াং ফুক কোর্ট নামে পরিচিত এই বিশাল আবাসন প্রকল্পে প্রায় চার হাজার আটশ মানুষের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে তারই এক অংশে তখন নির্মাণকাজ চলছিল এবং সেই অংশ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয় এক টাওয়ার থেকে অন্যটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি কারণ নির্মাণাধীন অংশগুলি সঠিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢেকে রাখা ছিল না এবং ব্যবহৃত সামগ্রী ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ
হংকংয়ের দমকল কর্মীরা শতাধিক ইঞ্জিন নিয়ে টানা কয়েক ঘণ্টা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন কিন্তু আগুন এতটাই তীব্র ছিল যে ভোর পর্যন্তও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি আগুন নেভানো কঠিন হয়ে ওঠে কারণ আবাসনের প্রতিটি টাওয়ারে ছিল পঁয়ত্রিশটি তলা এবং সেখানকার প্রতিটি তলায় ছিল বিপুল পরিমাণ দাহ্য উপাদান
এই ঘটনার পর হংকংয়ের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং অনেকেই জানতে চাইছেন কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল এবং কেন আগে থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও কারণ এত বড় নির্মাণ প্রকল্পে নিয়মিত পরিদর্শন ও নিরাপত্তা যাচাই করার কথা কিন্তু সেটি ঠিক ভাবে করা হয়েছিল কি না তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা
আরও উদ্বেগের বিষয় হল এখনও পর্যন্ত নিখোঁজদের সন্ধানের কোনও নিশ্চিত পথ পাওয়া যায়নি নিখোঁজদের অনেকেই আবাসনের ভিতরে আটকে থাকতে পারেন কারণ অনেক সিঁড়ি এবং লিফট আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ভিতরে ঢোকার পথ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে উদ্ধার অভিযান চলছে কিন্তু বিপদের মাত্রা এতটাই যে প্রতিটি পদক্ষেপই নিতে হচ্ছে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে
হংকংয়ের এই অগ্নিকাণ্ড শহরের অবকাঠামো নির্মাণের মান নিরাপত্তা নীতি এবং নির্মাণ সংক্রান্ত তদারকি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে এমন একটি আধুনিক উন্নত শহরে কী ভাবে এত বড় মাত্রার অবহেলা থেকে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে
হংকঙে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়নি কারণ প্রতিটি ঘণ্টা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে নিখোঁজের তালিকা আরও বড় হচ্ছে এবং শহরজুড়ে শোক উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে উদ্ধারকর্মীরা নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যাতে যত বেশি সম্ভব মানুষকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা যায় কিন্তু আগুনের তীব্রতা এবং ঘটনার ভয়াবহতা তাঁদের কাজকে অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছে বহু তলা বিশিষ্ট এই আবাসনগুলির ভিতরে প্রবেশ করা এখন এক বিশাল চ্যালেঞ্জ কারণ ভবনের ভেতরে এখনো ঘন ধোঁয়ার স্তর জমে আছে নানা জায়গায় ভস্মীভূত কাঠামো পড়ে আছে এবং সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দাহ্য পদার্থের অবশিষ্টাংশ যেগুলি উদ্ধারকাজকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে
এই ভয়াবহ আগুনের পর তদন্তকারীরা চেষ্টা করছেন আগুন লাগার উৎস এবং ছড়িয়ে পড়ার গতিপথ নির্ণয় করতে প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে যে এই অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল একাধিক অবহেলা এবং সুরক্ষা বিধির মারাত্মক লঙ্ঘন নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সামগ্রীগুলির মান অত্যন্ত নিম্নমানের ছিল এবং নির্মাণাধীন অংশে সঠিকভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এমনকি ভবনের বাইরের দিক ঢেকে রাখা সবুজ জালিগুলিও ছিল দাহ্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন যা আগুন দ্রুত এক তলা থেকে আর এক তলায় ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করেছে
দমকল কর্মীদের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আবাসনের ভেতরের তাপমাত্রা এখনো অত্যন্ত বেশি সেই সঙ্গে ভেঙে পড়া কাঠামো উদ্ধার অভিযানকে বার বার বাধা দিচ্ছে বাতাসে এমন ঘন ধোঁয়া রয়েছে যে অনেক জায়গায় শ্বাস নেওয়াই বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে তবুও উদ্ধারকারী দল তাঁদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে প্রতিটি কক্ষ প্রতিটি তলা এবং প্রতিটি কোণ খুঁজে দেখছেন যাতে কোনও মানুষ পেছনে পড়ে না থাকে
এই অগ্নিকাণ্ড এমন এক সময় ঘটেছে যখন বহুতল আবাসনগুলির নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে চলছিল এবং সেই কারণেই ভবনগুলির চারপাশে গাদা হয়ে ছিল নানা দাহ্য উপাদান যেমন কাঠ বোর্ড প্লাস্টিকের অংশ থিনার এবং আরও বহু রাসায়নিক পদার্থ যেগুলি আগুনের বিস্তারকে আরও দ্রুত করে তুলেছে বিশেষজ্ঞদের মতে এসব উপাদান সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলে এবং আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা বিধি অনুসরণ করা হলে হয়তো আগুনের তীব্রতা এতোটা ভয়াবহ হতো না
ঘটনার পর অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন যে নির্মাণ সংস্থার তরফ থেকে সঠিক ভাবে তাদের জানানো হয়নি যে আগুন লাগার আশঙ্কা রয়েছে নির্মাণ এলাকার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি এবং কোনও জরুরি পরিস্থিতির পরিকল্পনাও ঠিক মতো করা হয়নি ফলে আতঙ্কে বহু মানুষ সময়মতো বেরোতে পারেননি এবং অনেকে আটকে পড়েছেন নিজেদের ঘরের মধ্যে
দীর্ঘ তদন্ত শেষে জানা যাবে এই অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ কী তবে প্রাথমিক তথ্য থেকেই স্পষ্ট হয়েছে যে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার গাফিলতি ছিল ভয়াবহ মাত্রার তাঁদের অবহেলা শুধুমাত্র আর্থিক ক্ষতি ঘটায়নি বরং কেড়ে নিয়েছে বহু মূল্যবান প্রাণ হংকং পুলিশের এক সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন যে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কোনও ধরনের অবহেলা ক্ষমা করা হবে না
এই ঘটনার পর শহরজুড়ে এক ধরনের ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন আধুনিক এক মহানগরে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে যেখানে নিরাপত্তাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নিরাপত্তা বিধি মানা হয়েছে কি না তা তদারকি করার দায়িত্ব ছিল প্রশাসনের এবং সেই জায়গাতেও ব্যর্থতা দেখা গেছে বলে মনে করছেন অনেকেই
এই অগ্নিকাণ্ড হংকংয়ের ইতিহাসে একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত হিসেবে চিরকাল থেকে যাবে কারণ এতে প্রমাণিত হলো কতটা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে নির্মাণশিল্পে অবহেলা এবং সুরক্ষা বিধির প্রতি উদাসীনতা শহরটির কাছে এটি এক কালো দিন এক এমন দিন যা দীর্ঘ সময় ধরে মনে রাখা হবে কারণ এই দিনটি শুধু প্রাণহানিই ঘটায়নি বরং সামনে এনে দিয়েছে আধুনিক নগরজীবনের নানা দুর্বলতা
আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে এলেও বিপদের শেষ হয়নি কারণ ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনও কেউ আটকে থাকতে পারেন এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না উদ্ধারকারী দল অব্যাহত রাখছে তাঁদের অভিযান যতক্ষণ না শেষ মানুষটি বের করে আনা যায় সেই সঙ্গে চলছে ফরেনসিক তদন্ত যাতে ভবিষ্যতে একই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়
এই ঘটনা স্পষ্ট এক শিক্ষা দিয়ে গেল যে কোনও ধরনের অবহেলা বিশেষ করে জীবন নিরাপত্তা সম্পর্কিত অবহেলা কখনওই ক্ষমা করার নয় কারণ এর ফল হতে পারে ভয়াবহ এইজন্যই হংকংয়ের প্রশাসন ভবিষ্যতে নির্মাণ শিল্পে নিরাপত্তা বিধি আরও কঠোর করতে চলেছে এবং সঠিক তদারকি নিশ্চিত করতে নতুন নীতিমালা আনতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কর্মকর্তারা
এই অগ্নিকাণ্ডের স্মৃতি আগামী বহু বছর ধরে বয়ে বেড়াতে হবে শহরটিকে এবং এটি বারবার মনে করিয়ে দেবে যে নিরাপত্তাকে অবহেলা করলে তার মূল্য চুকাতে হয় জীবনের বিনিময়ে