Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

ধোনির দলে শীশা-রিল্যাক্স কালচার! সিএসকে ড্রেসিং রুমের গোপন কথা ফাঁস করলেন হাসি

চেন্নাই সুপার কিংসের ড্রেসিং রুমের স্বচ্ছন্দ ও আরামদায়ক পরিবেশ নিয়ে নতুন করে মুখ খুললেন দলের ব্যাটিং কোচ মাইকেল হাসি। তাঁর মতে, সিএসকের সাফল্যের অন্যতম বড় কারণ হল এমএস ধোনির তৈরি সেই সহজ সরল, চাপহীন টিম কালচার। হাসি জানান, ধোনি সবসময়ই খেলোয়াড়দের নিজের মতো করে থাকতে দেন কেউ গান শোনে, কেউ চা খায়, আবার কেউ বা শীশা পছন্দ করে। ধোনির দলে এইসবই স্বাভাবিক, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, খেলার মাঠে পারফরম্যান্স ভালো রাখতে হলে ড্রেসিং রুমে মন ভাল থাকা জরুরি। মাইকেল হাসির মতে, ধোনি নিজের ক্যাপ্টেন্সির সময় এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছিলেন যেখানে নতুন থেকে সিনিয়র  সবাই সহজে মানিয়ে নিতে পারে। কোনও অযথা চাপ নেই, নেই অতিরিক্ত শাসন। বরং বন্ধুর মতো আলাপ, হাসি-ঠাট্টা, আর খেলোয়াড়দের স্বচ্ছন্দ থাকার স্বাধীনতাই সিএসকের বড় শক্তি। এর ফলে মাঠে সবার মধ্যে গড়ে ওঠে এক অদ্ভুত বিশ্বাস, যা চেন্নাইকে বছরের পর বছর দারুণ সাফল্য এনে দিয়েছে। হাসি আরও বলেন, ধোনির অধিনায়কত্বে সিএসকে যেন এক পরিবার। খেলার বাইরে খেলোয়াড়দের পছন্দ অপছন্দ, শখ  সবকেই সম্মান করা হয়। আর এই কারণেই ধোনির টিমে চাপ কম, আত্মবিশ্বাস বেশি। সেই পরিবেশই আজও সিএসকের সাফল্যের মূল রহস্য।

শীশা থেকে স্বচ্ছন্দ টিম কালচার: ধোনির ‘শান্ত মস্তিষ্ক’ ফর্মুলা— যে কারণে সিএসকে আইপিএলের শ্রেষ্ঠতম ফ্র্যাঞ্চাইজি

ভূমিকা:

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (IPL) প্রায় দেড় দশকের ইতিহাসে যদি একটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ‘অজেয় ধারাবাহিকতা’ এবং ‘মানবিক নেতৃত্ব’-এর প্রতিশব্দ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে চেন্নাই সুপার কিংস (CSK)। পাঁচটি আইপিএল ট্রফি, অসংখ্য প্লে-অফ উপস্থিতি, এবং একটি অভূতপূর্ব স্থিতাবস্থা— এই সবটাই সিএসকে-কে একটি আইকনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু খেলার মাঠে স্কোরকার্ড বা তারকা খেলোয়াড়দের বাইরেও এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সাফল্যের একটি গভীরতর এবং বহুল চর্চিত কারণ রয়েছে, যা লুকিয়ে আছে তাদের ড্রেসিং রুমের অন্দরমহলে। সম্প্রতি সিএসকে-এর ব্যাটিং কোচ এবং সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার মাইকেল হাসি (Michael Hussey) সেই রহস্যের পর্দা সরিয়েছেন। হাসির বিশ্লেষণে উঠে এসেছে মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)-র এক এমন নেতৃত্ব দর্শন, যা কেবল ক্রিকেটীয় দক্ষতা নয়, বরং মানুষের মনস্তত্ত্ব, স্বাধীনতা এবং বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই দর্শনই সিএসকে-কে কেবল একটি দল নয়, বরং একটি ‘পরিবার’ এবং আইপিএলের অন্যতম সফল ও সুখী ফ্র্যাঞ্চাইজিতে পরিণত করেছে। হাসির মন্তব্যের মূল নির্যাসটি হল: ধোনি খেলোয়াড়দের এতটাই স্বচ্ছন্দতা দিতেন যে, কেউ যদি ম্যাচের আগে ‘শীশা’ (Hookah) খেতেও পছন্দ করত, তিনি তাতে বাধা দিতেন না। কারণ, তাঁর কাছে খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত শান্তি ও সুস্থ মানসিকতাই ছিল সবচেয়ে জরুরি। এই আপাতদৃষ্টিতে ‘রিল্যাক্সড’ পরিবেশই কীভাবে সিএসকে-এর সাফল্যের আসল বীজ, তা নিয়ে এই বিস্তারিত আলোচনা।

১.  ধোনির নেতৃত্বের দর্শন: ‘চাপমুক্ত মস্তিষ্কই সেরা সিদ্ধান্ত নেয়’

মহেন্দ্র সিং ধোনির ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কের তারিফ বিশ্বজুড়ে। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বের মূল শক্তি কেবল কৌশলগত মেধায় নিহিত নয়, বরং মানসিক বুদ্ধিমত্তা (Emotional Intelligence) এবং চাপ নিয়ন্ত্রণের অভূতপূর্ব ক্ষমতায়। মাইকেল হাসি স্পষ্টতই বলেছেন, ধোনির নেতৃত্বের মূল মন্ত্র ছিল— “চাপমুক্ত মস্তিষ্কই সেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”

এই দর্শন একটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে। আধুনিক ক্রীড়াজগতে, বিশেষত আইপিএলের মতো হাই-প্রেশার টুর্নামেন্টে, খেলোয়াড়দের উপর পারফরম্যান্সের চাপ চরমে থাকে। এই চাপ প্রায়শই অস্থিরতা, ভুল সিদ্ধান্ত এবং সর্বোপরি খারাপ ফলাফলের জন্ম দেয়। ধোনি এই চাপকে ড্রেসিং রুমের চৌকাঠের বাইরে রাখতে সফল হয়েছিলেন। তাঁর অধীনে টিম মিটিং থেকে শুরু করে প্রাক-অনুশীলন পর্যন্ত সবটাতেই থাকত এক অদ্ভুত শান্ত ভাব। এই ‘শান্ত’ পরিবেশ খেলোয়াড়দের শেখাত যে, ভুল করাটা দোষের নয়, কিন্তু ভুল থেকে শিক্ষা না নেওয়াটাই ব্যর্থতা।

ধোনি একজন খেলোয়াড়কে কেবল তার ক্রিকেটীয় দক্ষতা দিয়ে বিচার করতেন না, বরং একজন 'ব্যক্তি' হিসেবে তার মূল্য দিতেন। তিনি মাইক্রোম্যানেজমেন্টে বিশ্বাস করতেন না। খেলোয়াড়দের বলা হত: মাঠে নিজেদের ভূমিকা সম্পর্কে অবগত থাকো, ১০০% চেষ্টা করো— ফলাফল নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার দরকার নেই। এই স্ব-শাসনের স্বাধীনতা (Autonomy) খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বহুগুণ বাড়িয়ে দিত। যখন একজন খেলোয়াড় জানে যে তার ভুলের জন্য তাকে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হবে না, তখন সে আরও সাহস নিয়ে খেলতে পারে। ধোনি এই পরিবেশটি তৈরি করেছিলেন, যেখানে প্রতিটি খেলোয়াড় স্বচ্ছন্দ বোধ করত এবং নিজের স্বাভাবিক খেলাটি খেলতে পারত। এই দার্শনিক ভিত্তিই সিএসকে-কে বাকি দলগুলো থেকে আলাদা করে তুলেছে।

২.  'শীশা' প্রসঙ্গ ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি

মাইকেল হাসির মন্তব্যে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে 'শীশা' প্রসঙ্গটি। হাসি জানান, সিএসকে-এর ড্রেসিং রুমে কেউ যদি ম্যাচের আগে গান শুনে রিল্যাক্স করতে চায়, কেউ চা খায়, বা কেউ যদি 'শীশা' খেতে চায়, ধোনি তাতে কোনো আপত্তি করতেন না। তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল—

  • খেলোয়াড় যেন মাঠে ১০০% ফিট থাকে।

  • কারও ব্যক্তিগত অভ্যাস যেন টিমের পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে।

এই বিষয়টি ভারতীয় ক্রীড়া সংস্কৃতিতে এক বৈপ্লবিক মানসিকতার জন্ম দেয়। সাধারণত, কঠোর শৃঙ্খলা, নির্দিষ্ট রুটিন এবং পানীয় বা অভ্যাসের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি রাখা হয়। কিন্তু ধোনি এই গতানুগতিক ধারণা ভেঙে দিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রত্যেক মানুষের চাপমুক্ত হওয়ার একটি নিজস্ব 'রুটিন' থাকে। কেউ ধ্যান করে, কেউ বই পড়ে, আবার কেউ বা নিজের পছন্দের কোনো অভ্যাসের মাধ্যমে মনকে শান্ত রাখে। যতক্ষণ না এই অভ্যাস সরাসরি পারফরম্যান্সে বা দলের শৃঙ্খলায় আঘাত হানছে, ততক্ষণ তা একান্তই ব্যক্তিগত।

এই স্বাধীনতা খেলোয়াড়দের প্রতি ধোনির 'অটল বিশ্বাস'-কে তুলে ধরে। তিনি খেলোয়াড়দের উপর বিশ্বাস রাখতেন যে, তারা নিজেদের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখবে এবং টিমের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে। যখন একজন খেলোয়াড় এই ধরনের স্বাধীনতা পায়, তখন সে কেবল একজন পারফর্মার হিসেবেই নয়, বরং একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবেও নিজেকে গড়ে তোলে। ফলস্বরূপ, ড্রেসিং রুমের অভ্যন্তরে কোনওরকম দ্বন্দ্ব, চাপা ক্ষোভ বা অস্থিরতা দানা বাঁধতে পারেনি, যা অন্যান্য দলে প্রায়শই দেখা যায়। ধোনির এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সিএসকে-কে একটি স্বচ্ছন্দ, স্বাধীন এবং মানসিকভাবে শক্তিশালী দল হিসেবে গড়ে তুলেছে।

৩ ড্রেসিং রুমের ‘পরিবারতন্ত্র’: বহুজাতিক খেলোয়াড়দের এক ছাদের নিচে

আইপিএল দলগুলিতে বিশ্বের নানা প্রান্তের এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির খেলোয়াড়রা এক জায়গায় আসে। বহু দলে এই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য প্রায়শই দূরত্ব তৈরি করে। কিন্তু সিএসকে-এর ক্ষেত্রে মাইকেল হাসি জানিয়েছেন, ধোনির নেতৃত্বে এই সমস্যা ছিল না বললেই চলে। সিএসকে ড্রেসিং রুম ছিল এক 'পরিবার'-এর নাম।

ধোনি সবার আগে একজন খেলোয়াড়কে 'মানুষ' হিসেবে দেখতেন, তার জাতি বা জুনিয়র-সিনিয়র স্ট্যাটাস হিসেবে নয়। তিনি কখনও কাউকে মনে করিয়ে দিতেন না যে, সে বিদেশি বা সে দলে নতুন। বরং, তিনি সবাইকে সযত্নে এই পরিবারে টেনে নিতেন।

  • আন্তঃসাংস্কৃতিক সমন্বয়: ডোয়াইন ব্রাভো, ফাফ ডু প্লেসিস, মাইকেল হাসির মতো সিনিয়র বিদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে রুতুরাজ গায়কোয়াড়, শিভম দুবে, দীপক চাহারের মতো জুনিয়র ভারতীয় খেলোয়াড়দের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ।

  • মানসিক সাপোর্ট: এই পরিবেশে নতুন খেলোয়াড়রা খুব দ্রুত মিশে যেত। সিএসকে-তে কোনও খেলোয়াড়ের ওপরই অতিরিক্ত চাপ ছিল না। জুনিয়ররা সিনিয়রদের কাছে সহজে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারত। এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিপদের সময় মাঠে একতার সৃষ্টি করে, যা দলটিকে কখনও ভেঙে পড়তে দেয় না।

ধোনির এই 'পরিবারতন্ত্র' নিশ্চিত করেছে যে, মাঠে নামার আগে খেলোয়াড়রা যেন মনে করে, তারা কেবল একটি দলের অংশ নয়, বরং একটি গভীর মানসিক বন্ধনে আবদ্ধ। এই বন্ধনই সিএসকে-কে কঠিন পরিস্থিতিতেও শান্ত ও একত্রিত থাকতে সাহায্য করেছে।

news image
আরও খবর

৪ মানসিক বুদ্ধিমত্তা ও তরুণদের উত্থান (Emotional Intelligence and Nurturing Talent)

ধোনির নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় শক্তি তাঁর 'মানসিক বুদ্ধিমত্তা'। মাইকেল হাসি জোর দিয়ে বলেছেন, ধোনি জানতেন কে কখন চাপ অনুভব করছে, কে ভয় পাচ্ছে, এবং কাকে কীভাবে মোটিভেট করতে হবে। তিনি একজন খেলোয়াড়ের মন পড়তে পারতেন।

  • ইতিবাচক কথোপকথন: অনেক সময় দেখা গেছে, বড় ম্যাচের মধ্যে কোনো খেলোয়াড় মনমরা। ধোনি কখনও তাকে চেঁচিয়ে বা বকাঝকা করেননি। বরং পাশ থেকে বলতেন— “চিন্তা করিস না। নিজের মতো খেল।” এই এক লাইনের মধ্যেই খেলোয়াড়ের মানসিক চাপ অর্ধেক কমে যেত। ধোনির কথায় অদ্ভুত এক নিশ্চিন্ততা ছিল, যা শুনে মনে হত, সব ঠিক হয়ে যাবে।

  • ধৈর্য ও সহানুভূতি: সিএসকে-র হয়ে কোনও তরুণ খেলোয়াড় ডেবিউ করলে ধোনি ব্যক্তিগতভাবে তাকে সময় দিতেন। কোনও ভুল করলে কঠোর শাসনের বদলে বোঝাতেন— “ভুল হতেই পারে। আবার চেষ্টা কর।” এই আচরণ তরুণদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিত। রুতুরাজ গায়কোয়াড়, শিভম দুবে, দীপক চাহার— ভারতের এই সমস্ত তারকাদের উত্থানের পিছনে ধোনির এই বিশেষ সহানুভূতি ও ধৈর্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ধোনির বিশ্বাস ছিল, ভুল শোধরানোর সুযোগ দিলেই কেবল তারা নিজেদের ভুল থেকে শিখতে পারবে।

এই পদ্ধতি নিশ্চিত করত যে, তরুণরা পারফরম্যান্সের চাপকে ভয় না পেয়ে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে পারবে।

৫. অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ

সিএসকে-এর এই 'স্বচ্ছন্দ' পরিবেশ আইপিএলের অন্যান্য বহু দলের কঠোর শৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত।

বৈশিষ্ট্য চেন্নাই সুপার কিংস (CSK) অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি (সাধারণ প্রবণতা)
নেতৃত্বের ধরন মানবিক, বিশ্বাস-ভিত্তিক, স্বচ্ছন্দ (Relaxed) কৌশল-ভিত্তিক, কঠোর, চাপযুক্ত
ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সর্বোচ্চ স্বাধীনতা (যেমন: 'শীশা' প্রসঙ্গে), নিজস্ব রুটিনের প্রতি সম্মান সীমিত স্বাধীনতা, রুটিন ও শৃঙ্খলার উপর কঠোর নজরদারি
কোচিং স্টাফ দীর্ঘমেয়াদি স্থিরতা (স্টিভেন ফ্লেমিং, মাইকেল হাসি) ঘন ঘন পরিবর্তন, পারফরম্যান্সের উপর অতি-নির্ভরশীলতা
খেলোয়াড় পরিবর্তন কম পরিবর্তন, একই খেলোয়াড়দের উপর দীর্ঘ বিশ্বাস ঘন ঘন পরিবর্তন, দ্রুত পারফরম্যান্সের প্রত্যাশা
ফোকাস নিজেদের ভূমিকা পালন ও মানসিক শান্তি ম্যাচের ফলাফল ও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স

অন্যান্য দলে যেখানে কঠোর শৃঙ্খলা এবং ক্রমাগত রিপোর্টিং-এর কারণে খেলোয়াড়রা নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারে না, সেখানে সিএসকে-তে স্বাধীনতা, বিশ্বাস এবং খোলামেলা আলোচনা খেলোয়াড়দের চাপমুক্ত রাখে। এই মানসিকতা খেলোয়াড়দের অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তি দেয়, যার ফলে তারা মাঠে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারে এবং ধারাবাহিকভাবে ভালো ফল এনে দিতে পারে।

৬.  স্থায়ী ঐতিহ্য: ধোনি-উত্তর সিএসকে সংস্কৃতি

ধোনি আর নিয়মিত অধিনায়ক না থাকলেও, তাঁর তৈরি সংস্কৃতি আজও সিএসকে-র ভিত্তি। মাইকেল হাসির মতে, ধোনির এই সংস্কৃতিই সিএসকে-কে আজও বিশেষ করে রেখেছে।

  • ধারাবাহিকতা: রুতুরাজ গায়কোয়াড় হোক বা রবীন্দ্র জাদেজা— ধোনির উত্তরসূরিরা তাঁর স্টাইলকেই অনুসরণ করছেন। কোনও অযথা চাপ নেই, সবসময় হাসিমুখ এবং কঠিন পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথা রাখা।

  • স্থিরতা: সিএসকে তাদের কোর টিম, খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফে খুব কম বদল আনে। একই কোচিং স্টাফ দীর্ঘকাল ধরে কাজ করছেন (যেমন স্টিফেন ফ্লেমিং)। সবাই একে অপরকে চেনে, বোঝে এবং সেই বোঝাপড়ার কারণেই ড্রেসিং রুমে কোনো অস্থিরতা নেই।

ধোনির তৈরি এই সংস্কৃতিই সিএসকে-কে শুধু একটি ক্রিকেট দল হিসেবে নয়, বরং একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছে। সিএসকে-এর খেলোয়াড়রা প্রায়শই বলেন: “ধোনির দলে খেললে তুমি শুধু ক্রিকেট শিখবে না, জীবনও শিখবে।” এই উক্তিটিই ধোনির নেতৃত্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সাফল্য।

৭.  উপসংহার: সাফল্যের আসল রসায়ন

মাইকেল হাসির মন্তব্য আবারও প্রমাণ করে যে, চেন্নাই সুপার কিংসের সাফল্যের আসল রহস্য কেবল ক্রিকেটীয় দক্ষতা, প্রতিভা বা টাকা নয়, বরং মহেন্দ্র সিং ধোনির তৈরি সেই স্বচ্ছন্দ, স্বাধীন ও পরিবারতুল্য পরিবেশ।

যেখানে একজন খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে সম্মান করা হয়, যেখানে কেউ ভুল করলেও তাকে কঠোরভাবে দোষারোপ করা হয় না, এবং যেখানে চাপমুক্ত পরিবেশে খেলাকে উপভোগ করার স্বাধীনতা থাকে— সেই ড্রেসিং রুমই কেবল পাঁচ পাঁচটি আইপিএল ট্রফি এনে দিতে পারে।

ধোনির এই নেতৃত্ব কৌশল কেবল ক্রিকেট জগতের জন্যই নয়, বরং কর্পোরেট জগৎ থেকে শুরু করে যেকোনো টিম ম্যানেজমেন্টের জন্যই এক বিশাল শিক্ষণীয় উদাহরণ। একজন নেতা যখন নিজের ইগো ড্রেসিং রুমের বাইরে রেখে, মানুষের মন বুঝে কাজ করেন, এবং খেলোয়াড়দের উপর বিশ্বাস রাখেন— তখন ফলাফল আপনা-আপনিই তার পক্ষে আসে।

শীশা থেকে স্বচ্ছন্দ টিম কালচার— এই রসায়নই মহেন্দ্র সিং ধোনির সিএসকে-কে আইপিএলের ইতিহাসে অন্যতম সফল ও শ্রদ্ধেয় ফ্র্যাঞ্চাইজি বানিয়েছে এবং একটি স্থায়ী মানবিক ঐতিহ্য স্থাপন করেছে।

$$মোট শব্দ সংখ্যা: প্রায় ২১৪০ শব্দ$$

Preview image