Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

নরককুণ্ড আততায়ীর পরিচয় জানতেই আফগান নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করল ট্রাম্প প্রশাসন

অভিযুক্তের নাম রহমানুল্লা লাকানওয়াল আফগান নাগরিক যিনি ২০২১ সালে অপারেশন অ্যালাইস ওয়েলকাম-এর সময় মার্কিন মুলুকে প্রবেশ করেছিলেন এবং ওয়াশিংটনের বেলিংহামে বসবাস করছিলেন

নরককুণ্ড আততায়ীর পরিচয় জানতেই আফগান নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করল ট্রাম্প প্রশাসন
International Relations

বৃহস্পতিবার ভোরে হোয়াইট হাউসের উত্তর-পশ্চিমে মাত্র দু’টি ব্লক দূরে এক যুবক হঠাৎ করে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন যা সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ঘটনাটি ঘটেছিল ওয়াশিংটনের বেলিংহাম এলাকার কাছে যেখানে স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সেই সময় উপস্থিত ছিলেন। গুলির আওয়াজ শুনে সবার মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং নিরাপত্তা বাহিনী তৎক্ষণাৎ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বন্দুকধারীর গুলির পাল্টা জবাব দেয়া হয় এবং পরে জানা যায়, তার নাম রহমানুল্লা লাকানওয়াল এবং তিনি আফগানিস্তানের নাগরিক।

এই ঘটনায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি এক বিবৃতিতে বলেছেন যে এই ঘটনা শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ নয় বরং এটি মানবতাবিরোধী অপরাধও। তিনি আরও বলেন আফগানিস্তান থেকে আসা এই যুবক বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের একজন নাগরিক এবং তার কর্মকাণ্ড আমেরিকার জনগণের জন্য বড় ধরনের হুমকি। ট্রাম্প প্রশাসন একই সঙ্গে ঘোষণা করেছে যে ২০২১ সালে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি বেআইনি ভাবে মার্কিন মুলুকে প্রবেশ করেছিলেন তার সাথে সম্পর্কিত কোনো আফগান নাগরিকের দেশটিতে প্রবেশ বন্ধ করতে তারা কড়া পদক্ষেপ নেবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন একটি শক্ত অবস্থান নিয়েছে যা ভবিষ্যতে আফগান নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে আরও কঠিন নিয়ম এবং নিয়মাবলী সৃষ্টি করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে এবং এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারে। এই ঘটনায় আমেরিকা ও আফগানিস্তানের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী হবে তা এখনো অনিশ্চিত তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

রহমানুল্লা লাকানওয়াল এক আফগান নাগরিক যিনি ২০২১ সালে মার্কিন সরকারের অপারেশন ‘অ্যালাইস ওয়েলকাম’-এর আওতায় দেশে প্রবেশ করেন। বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি ওয়াশিংটনের বেলিংহামে অবস্থান করছিলেন। ২৯ বছর বয়সী এই যুবক দেশটির নাগরিক হলেও তার কেন এমন হামলা চালানো ছিল তা এখনো স্পষ্ট নয়। কিন্তু, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর মধ্যেই অভিযুক্তের পরিচয় প্রকাশ্যে আনতে শুরু করেছেন এবং তাঁর দেশ প্রবেশের পদ্ধতিতে কোনো ত্রুটি হলে তার ফলস্বরূপ অন্যদের ওপর কি ধরনের চাপ আসবে তাও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ঘটনার পরপরই ট্রাম্প প্রশাসন আফগানিস্তান থেকে আসা নাগরিকদের দেশে প্রবেশে কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতরের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, অভিযুক্ত ব্যক্তির আফগান নাগরিক হওয়ার বিষয়টি অবগত হওয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, "আমরা এখন থেকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন মুলুকে আসা সব বিদেশির ওপর আরও যাচাই-বাছাই করব। আফগানিস্তান যে দেশটি নরককুণ্ড হিসেবে পরিচিত, সেখানে কোনো রকম দয়া করা হবে না।"

এছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসন এমনভাবে বলছেন যে তারা আর কোনো আফগান নাগরিকের অভিবাসন আবেদন গ্রহণ করবে না। মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন বিভাগের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে যেখানে তারা জানিয়েছে যে, নিরাপত্তা এবং যাচাইকরণের বিধি নতুন করে পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত আফগান নাগরিকদের অভিবাসন সংক্রান্ত সমস্ত আবেদনের প্রক্রিয়াকরণ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন আফগান নাগরিকদের প্রতি কড়া অবস্থান গ্রহণ করেছে।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, আফগানিস্তান থেকে বহু মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়ার জন্য এসেছিলেন। মার্কিন সরকার তাদের জন্য 'অ্যালাইস ওয়েলকাম' নামক একটি প্রোগ্রাম চালু করে। এই প্রোগ্রামটির আওতায় আফগান নাগরিকদের মার্কিন মুলুকে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়। এই সময়ে এমন অনেক আফগান নাগরিক মার্কিন মুলুকে প্রবেশ করেছিলেন যাদের মধ্যে ছিলেন যারা সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন।

রহমানুল্লা লাকানওয়ালও এই প্রোগ্রামের আওতায় মার্কিন মুলুকে আসেন এবং ওয়াশিংটনের বেলিংহামে বসবাস করতে শুরু করেন। এর পর তিনি কীভাবে এই হামলা চালালেন তা এখনও স্পষ্ট নয় তবে ট্রাম্প প্রশাসন তার আগেই সতর্কতা জারি করেছে যে, এরকম আরও ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে এবং আফগান নাগরিকদের নিরাপত্তা বিষয়ক আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ঘটনার পর, ওয়াশিংটন শহরের নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। প্রাথমিকভাবে, হামলাকারীকে লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি চালানো হয়। পরে জানা যায়, হামলাকারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে হামলার পর আরও তদন্ত চলছে এবং এই ঘটনায় আমেরিকার নিরাপত্তা বাহিনীর প্রস্তুতি এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আরও আলোচনা হচ্ছে।

news image
আরও খবর

এছাড়াও, আমেরিকার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট এসেছে যে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের ফলে আফগান নাগরিকদের জন্য মার্কিন ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে এবং আগামীতেও এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

এই ঘটনার পর আমেরিকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন আফগান নাগরিকদের প্রতি এমন কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও, বিশ্বজুড়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে আফগান নাগরিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির পরিপন্থী।

বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থাগুলি ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং দাবি করেছে যে কোনো দেশের নাগরিকদের প্রতি একরকম আচরণ করা উচিত নয় এবং মানবাধিকার সুরক্ষিত রাখাটা জরুরি। এই ঘটনার পর, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আফগান নাগরিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তা বিশ্বজুড়ে একটি বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি মনে করে যে, কোনো দেশের নাগরিকদের তাদের জাতিগত কিংবা জাতীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে একরকম আচরণ করা অনুচিত এবং এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন।

এদিকে, আমেরিকা ও আফগানিস্তান এর মধ্যকার সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন তবে এখনো তা স্পষ্ট নয়। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকায় প্রবেশ করা নাগরিকদের ওপর এমন কড়া পদক্ষেপের পর, এর প্রভাব ভবিষ্যতে কীভাবে সম্পর্কের ওপর পড়বে তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপটি বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এটি মার্কিন নীতি ও বিদেশনীতি সম্পর্কিত ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, মার্কিন সুরক্ষা বাহিনীও তাদের প্রস্তুতি আরও বাড়ানোর কথা জানিয়েছে এবং এমন হামলার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

বিশ্ব রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর এই ঘটনার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব অত্যন্ত গভীর হতে পারে এবং এর প্রতিক্রিয়া সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। একদিকে যেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের কারণে আফগান নাগরিকদের প্রতি কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে সেখানে অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এর ফলে ভবিষ্যতে আফগান নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন একটি সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

অন্যদিকে মার্কিন প্রশাসন আফগান নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের কারণ হতে পারে যদি আন্তর্জাতিক সমঝোতা ও সহযোগিতা না থাকে। সুতরাং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া সামগ্রিকভাবে সম্পর্কগুলিকে আরও সংকটময় করে তুলতে পারে।

বিশ্ব রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর এই ঘটনার ফলে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে যা শুধুমাত্র আফগানিস্তান কিংবা আমেরিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে পারে যা বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। ভবিষ্যতে আফগান নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং বিশ্ব সম্প্রদায় একটি স্থিতিশীল এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করতে পারে।

Preview image